• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

অপরাধ

সক্রিয় স্বর্ণ চোরাকারবারিরা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১

বিমানবন্দরে যাত্রীচাপে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। রাতে আট ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধের কারণে দিনের অন্য সময়গুলোতে শাহজালালে প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। যাত্রীর চাপ সমালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এ সুযোগ নিতে মরিয়া চোরাকারবারিরা। খোদ বিমানের কর্মচারীদের ব্যবহার করে পাচারের সময় ধরা পড়েছে ৬ কোটি টাকার সোনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর রাত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের জন্য আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত রাতে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  (বেবিচক)। মূলত এরপর থেকে যাত্রী চাপে বেসামাল শাহজালালের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন, লাগেজ হ্যান্ডলিং, কাস্টমসহ প্রায় সব বিভাগের কর্মকর্তারা।  যাত্রীদের লাগেজ নেওয়ার জন্য ট্রলি সংকটে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের লাগেজ মাথায় করে নেওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। ট্রলি সংকটের জন্য খোদ মন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষমা চান।

জানা যায়, দিনে আগমনী ও বহির্গমন মিলে শাহজালালে ১০/১৫ হাজারের উপরে যাত্রী আসা যাওয়া করছে। আট ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও এ যাত্রীর কমেনি; বরং কম সময়ে এতসংখ্যক যাত্রীর কারণে সবকিছুই এখন যেন এলোমেলো অবস্থা। এই যখন অবস্থা সুযোগসন্ধানী চোরাকারবারিরা ঠিকই তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।  তৎপর হয়ে উঠেছে সোনা পাচারে। যাত্রী নিয়ে শাহজালাল যখন টালমাটাল অবস্থা তখন বড় চালান জব্দ করলো শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। খোদ বিমানের সিটের ভেতর এতো সূক্ষ্মভাবে লুকানো সহজেই গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু পূর্বে থেকে তথ্য থাকার কারণে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি দুবাই থেকে শাহজালালে পৌঁছার আগেই চট্রগ্রামের শাহআমানতেই তল্লাশি চালানো হয়। আর মেলে যায় ৬ কোটি টাকার প্রায় ১০ কেজি সোনার চালান। যা গত কয়েকমাসে এটি সোনার সবচেয়ে বড় চালান।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট গতকাল শনিবার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তল্লাশি করেন। সে সময় সিটের নিচে লুকানো অবস্থায় স্কচটেপে মোড়ানো চারটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে খোলা হয়। প্যাকেটগুলো খুলে ছিয়াশিটি সোনার বার পাওয়া যায়, যার ওজন ৯ কেজি ৯৭৬ গ্রাম। আনুমানিক বাজারমূল্য ছয় কোটি আটানব্বই লাখ বত্রিশ হাজার টাকা। জব্দ করা স্বর্ণবারগুলো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মূল্যবান শুল্ক গুদামে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে কাস্টমস অ্যাক্ট অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা এবং একটি ফৌজদারি মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এখন পর্যন্ত কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ১১১ কেজি ৫০০ গ্রাম সোনা আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৭৪ কেজি ৪৯০ গ্রাম এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৮০ কেজি ৩৫০ গ্রাম সোনা কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর আটক করে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ বলেন, চোরাকারবারিরা সবসময় সুযোগসন্ধানী। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বর্তমানে শাহজালালে যাত্রীর চাপ রয়েছে। এ কারণে এটাকে তারা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে সোনা পাচারের চেষ্টা করেছিল। আমাদের তৎপরতার কারণে তারা পারেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানের সিটের ভেতরে যে অবস্থায় সোনাগুলো পাওয়া গেছে তাতে করে এটি বলাই যায় বিমানের কেউ এ সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা সোনা জব্দের প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করবো। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদ পাওয়ার পরপরই আমরা ফ্লাইটটিকে আর শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করিনি। শাহআমানতেই আমরা তল্লাশি চালাই। আর সেখান থেকেই এগুলো জব্দ করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সোনার বড় চালানের সাথে বিমানের লোকজনই জড়িত। বিমানের ভেতরে যে প্রসেসে সোনাগুলো আনা হয় তাতে করে আমরা নিশ্চিত যে চোরাকারবারিদের সঙ্গে তাদের একটি যোগসাজশ ছাড়া এইভাবে সোনা নিয়ে আসা সম্ভব না।

কর্মকর্তারা বলেন, অবশ্য এর আগে বহুবার বিমানের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে আটক হওয়ার নজির রয়েছে। সে থেকেই বলা যায় সোনা পাচারের সঙ্গে বিমানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত।

কর্মকর্তারা বলেন, আমরা সবমসয় তাদের নজরদারির মধ্যে রাখি। বর্তমান সময়ে নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে। আর বাড়ানোর কারণে ধরা পড়ার ঘটনাও বাড়ছে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads