• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

অর্থ ও বাণিজ্য

অপরিশোধিত তেলের দরবৃদ্ধি

মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৮

চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। তেলের এই ঊর্ধ্বগতি বিশ্ব অর্থনীতিকে ঠেলে দিতে পারে মন্দার দিকে। ইতিহাস ঘাঁটলে এর প্রমাণ মেলে। যুক্তরাষ্ট্রে শেষ পাঁচ মন্দার কারণ ছিল তেলের দরবৃদ্ধি। 

২০০৮ সালের জুলাইয়ে মন্দার কবলে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। আর তেল ও ইস্পাতের দাম ওই সময় ঝুঁকিতে ফেলেছিল দেশটিকে। মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হওয়া প্রতিটি অর্থনৈতিক মন্দায় ভূমিকা রেখেছে তেলের দ্রুত দরবৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাটির প্রতিবেদন বলছে, তেলের দাম বাড়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের মন্দাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল ২৮ শতাংশ। পণ্যটির দাম বাড়তে থাকলে এ ঝুঁকি ২০২০ সালের মধ্যে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হবে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক কর্তন, ক্যাপিটল হিল চুক্তি সরকারের ব্যয় বাড়াতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুদের হারের পার্থক্যও মন্দা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।

পরমাণু প্রকল্প কেন্দ্র করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ট্রাম্প। এখন ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ভোক্তা দেশগুলোকে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে ইরানি তেল ক্রেতাদের কিছু সময় দেওয়া হবে। এ ছাড়া তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্প আলোচনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে।

এ অবস্থায় ইরান থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হলে চাপের সম্মুখীন হবে এর বাজার। চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান স্ট্যানফোর্ড সি বের্নস্টেইনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম পৌঁছবে ১৫০ ডলারে। গত সোমবার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যের সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তেল সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির হুমকি বাস্তবে পরিণত হলে সরবরাহ সঙ্কটে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ২০০ ডলারে ঠেকতে পারে। নিউ জার্সিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক আউটলুক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড বাওমল তেলের দাম ১০০, ১২৫ বা ১৫০ ডলারে ঠেকলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানালেও মন্দা তত্ত্বে বিশ্বাসী নন। তিনি বলেন, অতীতে তেলের দরবৃদ্ধি মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবার তাই হবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। গুরুত্ব দিতে হবে মৌলিক বিষয়গুলোয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রে শেল (এক ধরনের পাথর) থেকে তেল উৎপাদন রেকর্ড ছুঁয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে তেল উৎপাদনে দেশটি শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে যাবে। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি বিক্রি হয় প্রায় ৬৮ ডলারে। একই পরিমাণ ব্রেন্টের দাম এদিন ঠেকে ৭৩ ডলারের কাছাকাছি। ২০০৮ সালের জুনে মন্দার সময় ইউরোপে ব্রেন্টের দাম ১৪০ ডলারে পৌঁছেছিল। এর এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন বিক্রি হয় গড়ে ৪ ডলার ১১ সেন্টে। এ গ্যাসোলিন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ ডলার ৮৭ সেন্টে, জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ।

আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৫০ ডলারে উন্নীত হওয়ার আগেই বাড়বে শেল সরবরাহ। আর এতে বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকবে। আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মারকিট আগামী বছর প্রতি ব্যারেল তেল ৭৫ ডলারে বিক্রির পূর্বাভাস দিয়েছে। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads