• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
বিশাল এডিপিতে ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে উঠছে আজ

বিশাল এডিপিতে ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২১ মে ২০১৯

ধীরগতির কারণে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নামিয়ে আনা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়। কাটছাঁটের পরও উন্নয়নে গতি আসছে না। ১০ মাসে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) বরাদ্দের ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দুই মাসে ৭৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণের সংশয়ের মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য নেওয়া হচ্ছে বিশাল এডিপি। কলেবর ৩৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা বাড়লেও নতুন এডিপিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রত্যাশিত বরাদ্দ পাচ্ছে না। ৫০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রেখেই আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উঠছে নতুন এডিপির প্রস্তাব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ থাকবে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১২ হাজার ৩৯২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে। তবে সরকারের তহবিল, প্রকল্প সহায়তা ও সংস্থার নিজস্ব বরাদ্দসহ এবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে নতুন এডিপিতে ঘাটতি থাকবে ৫০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এডিপিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে সরকারের তহবিল আর বিদেশি সহায়তা বাবদ ২ লাখ ৫৩ হাজার ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা চেয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও বিদেশি সহায়তা বাবদ চাহিদা ছিল ৭২ হাজার ২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় এ দুই খাতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে চাহিদার তুলনায় ৫০ হাজার ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বিদেশি সহায়তায় বরাদ্দের ঘাটতি থাকছে ২২৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছোট আকারের বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নিয়ে এডিপি প্রণয়ন করা হলে অর্থায়নে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। প্রচলিত ধারায় রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রচুর প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয় হয় না। ফলে এ সব প্রকল্পে অর্থও বরাদ্দ হয় না। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট খাত চিহ্নিত করে বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান মো. খলিলুর রহমান বলেন, প্রতি বছর এডিপির আকার বাড়ছে। অবকাঠামো ঘাটতি পূরণে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাস্তবায়নের পরিস্থিতিও বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো দিক। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা পূরণ না হলেও সেটাকে ঘাটতি বলা যাবে না। সম্পদের সীমাবদ্ধতা, বাস্তবায়নের সক্ষমতা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় এডিপিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রস্তাবিত এডিপিতে চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে মাত্র ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় নতুন প্রকল্প নিরুৎসাহিত করলেও এ খাতে ৮ হাজার ৩৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। থোক বরাদ্দের এ অর্থ থেকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হবে।

বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে আরো ৯৬১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে থোক আর উন্নয়ন সহায়তা বাবদ নতুন এডিপিতে বরাদ্দ থাকছে ৯ হাজার ৩৫৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন পায়। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরের এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ৩৪ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১৯ শতাংশ।

এডিপির প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগামী বছর সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও বিমান পরিবহনে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এডিপির প্রায় ২৬ শতাংশ অর্থ। বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবার ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ পাবে ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাবে ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads