• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

অর্থ ও বাণিজ্য

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

উন্নয়নের নামে চব্বিশ কোটি টাকা তছরুপ

দরপত্র টেম্পারিং করে বাড়ানো হয়েছে ব্যয়

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৯

সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় খাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চললেও থেমে নেই আর্থিক মূল্যে ছোট দুর্নীতিগুলো। দেদার চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হরিলুট। এমনই এক দুর্নীতির তথ্য এসেছে বাংলাদেশের খবরের কাছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রায় ২৪ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে সরকারের একটি সংস্থার অনুসন্ধানে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। নিরাপদ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের দায়িত্ব অর্পণ করে ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় স্যানিটেশন সেবা প্রদানের দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে সরকার প্রথমেই ধ্বংসপ্রাপ্ত পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পদ্ধতিগুলোর পুনর্বাসনে গুরুত্বারোপ এবং তৎপরবর্তীতে নতুন অবকাঠামো স্থাপন শুরু করে ডিপিএইচই’র মাধ্যমে। একই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ওয়াসার আওতাধীন এলাকা ব্যতীত সমগ্র দেশের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এ অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত হয়। জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জনগণের নিকট নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরই ফলে বাংলাদেশ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করে আছে।

তবে অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না সংস্থাটির। কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ই ঘটে তহবিল তছরুপের ঘটনা।  বংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের নিরীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৫টি উন্নয়ন কাজে ২৪ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ঠিকাদারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ ও বেআইনিভাবে অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে এই অর্থ বেরিয়ে গেছে। জানতে চাইলে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিষয়টি আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি নিয়ে কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ এবং এর বিস্তারিত আমি বলতে পারছি না। সংসদের বিষয় এটি, তাই আমার বলার এখতিয়ার নেই।

অর্থ তছরুপের বিষয়ে জানতে কয়েক দফা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে টেলিফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সূত্রমতে, কোডাল বিধি ও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ১০ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ২৮৪ টাকা ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারকে। প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে মালামাল ক্রয় এবং তা খোলা আকাশের নিচে ভান্ডারজাত করা হয়েছে। ফলে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকার মালামালের অপচয় বেরিয়ে এসেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি ও দরপত্রের শর্ত উপেক্ষা করে টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াই ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মালামালের মাধ্যমে নলকূপ স্থাপন করায় অনিয়মিত ব্যয় ২ কোটি ৬৬ লাখ ১৮ হাজার ৮০৮ টাকা বের করে নেয় সংঘবদ্ধ চক্র।

শুধু তাই নয়, জালিয়াতির অভিনব কৌশল করা হয়েছে সংস্থাটিতে। মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা চাঁদার অর্থও কোষাগারে জমা পড়েনি। সংগৃহীত সহায়ক চাঁদার ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দবহির্ভূত দরপত্র আহ্বানের ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান করায় সরকারের ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৩ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। কার্যত জনগণের করের টাকা থেকে এই অবৈধ অর্থ বেরিয়ে যায়।

অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ব্যয়, নলকূপের সহায়ক চাঁদা ও যন্ত্রাংশের বিক্রয়লব্ধ অর্থ আত্মসাৎ, ভিএস মালামাল ঘাটতি ও ঘূর্ণায়মান তহবিল আত্মসাতের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের নিকট হতে সরকারি পাওনা আদায় না করায় রাষ্ট্রের ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৭ টাকা ক্ষতি হয়। ঠিকাদার দ্বারা স্থাপনকৃত নলকূপ হতে উত্তোলিত পানিতে নির্ধারিত মাত্রার বেশি আর্সেনিক পাওয়া সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই অর্থের পরিমাণ ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯০ টাকা। ব্যবহারযোগ্য টিউবওয়েল সামগ্রী দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে থাকায় ২৩ হাজার ২০ হাজার ৭৪৫ টাকা ক্ষতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্র টেম্পারিং করে দরপত্র মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কার্যাদেশ প্রদানে ক্ষতি ১৪ লাখ ৯১ ২৪ টাকা। আরেকটি জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্র টেম্পারিং করে কার্যাদেশ প্রদানে ক্ষতি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৭ টাকা। বিভিন্ন তদন্তে অর্থ লোপাটের তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। তবে নির্দেশনা থাকার পরও তা আদায় হয়নি।

আত্মসাৎকৃত অর্থ অনাদায়জনিত কারণে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ক্ষতি হয়। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বিভাগীয় রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা না করে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৯ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। উচ্চ মূল্যে হ্যান্ড পাম্প ক্রয় করায় সরকারের ১০ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ক্ষতি, চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের জন্য ১৮ লাখ টাকা ক্ষতি, পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র বিজ্ঞপ্তি সিপিটিইউ ওয়েবসাইটে প্রকাশ ব্যতিরেকে অনিয়মিতভাবে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ১২৮ টাকা ব্যয় নির্বাহ সংক্রান্ত জালিয়াতি উদঘাটিত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ তছরুপের বিষয়ে সংস্থাটির কাছে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads