• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাস্তবায়ন ৫০ শতাংশের কম

সংগৃহীত ছবি

ব্যবসার খবর

১০ মাসে এডিপির অগ্রগতি

বাস্তবায়ন ৫০ শতাংশের কম

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০২১

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রতিবছরই বিপাকে পড়তে হয় সরকারকে। নানা কারণে কোনোবছরই এডিপি লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। চলতি অর্থবছরেরও ১০ মাসে ২০৯,২৭২ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির অর্ধেকেরও বেশি (৫৩.৬৬ শতাংশ) বাস্তবায়ন করা যায়নি। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে মে এবং জুনের মধ্যে আরো ১১২,২৯৬.৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯৬,৯৭৫.৪ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশকিছু দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম অদক্ষতা এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট চক্র। এডিপি বাস্তবায়নের মূল্যায়ন হয় মূলত টাকা বরাদ্দের ওপর ভিত্তি করে। বছরের প্রথম ৬ মাসে  তেমন কাজ না হলেও শেষার্ধে তাড়াহুড়ো করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয়। বছরের শেষ মাসে এমনকি শেষদিনও বিপুল অর্থ ছাড়ের ঘটনা ঘটে। সিন্ডিকেট চক্রটি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সময়ক্ষেপণ করে থাকে। এতে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রকল্পেই এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার মধ্যদিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলেই এডিপি বাস্তবায়নের গতি আসবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রায়ই অভিযোগ উঠে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক এক ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যারা কন্ট্রাক্টগুলো ঘুরে ফিরে তারাই পেয়ে থাকে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এছাড়া, ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমটাকে ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেদিকেও নজর দিতে হবে।’  গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে কাঠামো গড়ে উঠেছে তা থেকে বের হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এডিপির বাস্তবায়নের একটা ঐতিহাসিক কাঠামো আছে। যার বাইরে আমাদের যাওয়া সম্ভব হয় না। প্রথম ৬ মাসে তেমন কোনো কাজ না হয় না। কিন্তু শেষার্ধের বিস্ময়কর গতিতে কাজ হয়।’ এডিপি বাস্তবায়নের সফলতা না হওয়া দক্ষতার অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, বাজেটে ঘোষিত এডিপির সাথে প্রকৃত বাস্তবায়ন যেটা কিনা বাজেটের পরবর্তী বছরেরও ৩ মাস পরে জানা যায়। এর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা ক্রমেই কমছে। যদিও এডিপির বাস্তবায়নকে পুনঃমূল্যায়িত (সংশোধিত) এডিপির ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু বাজেটে ঘোষিত এডিপির বাস্তবায়ন সংশোধিত এডিপির তুলনায় কম। সংশোধিত এডিপি ৯০ শতাংশের ওপর বাস্তবায়ন হলেও বাজেটে ঘোষিত এডিপির বাস্তবায়ন বর্তমানে ৮০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।’ সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের ন্যায় গত এক যুগেরও বেশি সময়ে প্রথম ১০ মাসে কোনো বছরই এত বেশি অর্থ অব্যয়িত থাকেনি।

গত অর্থবছর করোনার প্রকোপের মধ্যেও এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর হার ছিল ৫২ শতাংশ। ২০১০-১১ থেকে শুরু করে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর ৫৬ থেকে ৫৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল প্রথম ১০ মাসে।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান, সংশোধিত এডিপির সাধারণত ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এবার হয়তো করোনার কারণে বান্তবায়ন কিছুটা কম হবে। তিনি বলেন, ‘বছরের শেষের দিকে যেভাবে দ্রুত কিছু কাজ করা হয় তাতে কাজে গুণগত মান নিশ্চিত হয় না। সরকারের অর্থের বড় অপচয় হয়।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বার্ষিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সম্পদ কি পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে সেটি সাপেক্ষে অর্থাৎ, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে বাজেটটা প্রণয়ন করা হলে এতো পার্থক্য হতো না। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায় ব্যয়কে সামনে রেখে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অথচ আয়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয় সেগুলো প্রায়শঃই উচ্চাভিলাসী হওয়ায় ব্যয়ের কাঠামো ঠিক থাকে না। ফলে অনেক বেশি প্রকল্প নেওয়া হয়।

ড. গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, এডিপি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হলে আন্তর্জাতিক অডিট পদ্ধতি, মনিটরিং পদ্ধতি এগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ ব্যক্তি দিয়ে প্রকল্পের যাচাই মূল্যায়ন থাকা দরকার। যেমনটি বিদেশি প্রকল্পের ক্ষেত্রে রয়েছে। সেরকম দেশীয় অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন কাঠামো দরকার। প্রকিউরমেন্টের দুর্বলতাও দূর করতে হবে।

এদিকে, করোনার কারণে এবার বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, গাড়ি কেনা বাবদ বরাদ্দ বন্ধ ছিল। এছাড়া, সর্বশেষ সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাইরে সব মন্ত্রণালয়ের নতুন চুক্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব কারণে এডিপির আওতায় ব্যয় ত্বরান্বিত হওয়ার পরিবর্তে উল্টো এবার বেশ কিছু খাতে হ্রাস পেয়েছে অর্থব্যয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads