• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যবসায় সফল হতে চাইলে...

প্রতীকী ছবি

ব্যবসার খবর

ব্যবসায় সফল হতে চাইলে...

  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০২১

ব্যবসায় কীভাবে সফল হওয়া যায়-এ প্রশ্ন যতটা সহজ, উত্তর বা উপায়টা তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কঠিন। শুধু ব্যবসায় নয়, জীবনের যে-কোনো কিছুতেই সফল হওয়ার ফর্মুলা বলা কঠিন। নির্দিষ্ট কোনো কৌশল, উপায় বা পদ্ধতি নেই, যা অবলম্বন করে সহজে সফল বনে যাওয়া যায়। বরং সফল হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট উপায়, কৌশল বা পদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করলে সফল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। সাফল্যের পথটা চেনা যায়। তেমনই কিছু উপায় নিয়ে লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ

বিনয়ী হোন : যতই প্রতিভাবান কিংবা সৃষ্টিশীল হোন না কেন, অবশ্যই নম্রতা-ভদ্রতা থাকতে হবে। প্রতিদিন সাফল্যের পথ ছাড়িয়ে যেতে এবং ভালো হওয়ার একমাত্র উপায় নম্র। সাফল্যকে কখনো মাথার ওপর দিয়ে যেতে দেবেন না। যারা আপনার সাথে যাত্রার মাধ্যমে সফলতার পথ অতিক্রম করে তাদের সবাইকে অবশ্যই সম্মান করুন। কারণ প্রত্যেকের কাছ থেকেই সবসময় কোনো কিছু না কোনো কিছু শেখা যায়। মনে রাখবেন, কারো মাধ্যমে বা কারো কাছ থেকে আপনি যা শিখতে পারবেন, বই-পুস্তক-কিতাব পড়ে সেসব শেখা সম্ভব নয়। সেজন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখুন, ভালো ব্যবহার করুন। নম্রতা বজায় রাখুন।

যোগ্যতা জানুন : যেভাবে বিনয়ী হয়ে থাকেন, সেভাবেই আপনার শক্তি, সামর্থ্য জানুন এবং ব্যবহার করতে শিখুন। একজন বিজনেস ডেভেলপার হিসেবে খুঁজে বের করুন আপনার সেই যোগ্যতা, সামর্থ্য, শক্তি। তাহলে কর্মজীবনের শুরুতেই সকলে আপনাকে মূল্য দিতে আরম্ভ করবে। মূল্যায়ন করবে। সেজন্য ব্যবসা শুরুর আগেই নিজেকে মূল্যায়ন করুন। নিজের যোগ্যতা, মূল্য জানুন এবং নিশ্চিত করুন যে, মানুষ আপনাকে সেই যোগ্যতার মূল্যায়ন করবে।

কৌতূহলী হোন : কৌতূহল, ব্যবসায়িক উন্নতিতেই চমৎকার একটি উপায় নয়। এটি সুন্দর, সাবলীল মানসিকতা গড়ে তোলা এবং সুযোগ গড়ে তোলার চাবিকাঠিও বটে। আপনার চারদিকে কখন, কী, কীভাবে ঘটেছে সে ব্যাপারে আগ্রহী হোন। এ ছাড়া কাজের ব্যাপারেও উৎসাহী হোন। তা ছাড়া নিয়মিত কৌতূহল অনুশীলনও করতে পারেন।

যোগাযোগ চাবিকাঠি : সাফল্যের ভিত্তি হিসেবে সঠিক যোগাযোগ অন্যতম ভূমিকা রাখে। কারণ প্রতিটি মানুষ ভিন্নতর থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেকের শৈলীর সাথেই প্রত্যেকের মানিয়ে নিতে হয়। একজন সঠিক যোগাযোগকারী হওয়া মানে হচ্ছে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া। এ ছাড়া তাদের বুঝতে বাধ্য করা যে, আপনি তাদেরসহ সবকিছুই জয় করতে সক্ষম।

কথা বলার চেয়ে বেশি শুনুন : কথায় বলে, ‘কথা কম, কাজ বেশি।’ যারা বেশি কথা বলে মূলত তাদের দ্বারা আশানুরূপ কাজ আদায় করা যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কথা বলার চেয়ে শুনতে হবে। কারণ যারা কথা কম বলতে এবং বেশি শুনতে চেষ্টা করেন তাদের সাফল্যের পথটা সহজ হয়ে যায়। সেজন্য কম বলুন, বেশি শুনতে শিখুন। অন্যরা যা বলতে চাচ্ছে কিংবা যাই বলছে সবই শুনুন। শুনতে চেষ্টা করুন। তাতে করে আপনি অনেক তথ্য পেতে পারেন। অন্যকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অনেক কিছু বুঝতে পারেন। শুরুতে আপনার সহকর্মী বা বন্ধুদের সাথে এই ব্যাপারটা অনুশীলন করতে পারেন।

প্রশ্ন করতে ভয় পাবেন না : অনেকেই আছেন যারা প্রচুর জানেন। বোঝেন। পারেন। কিন্তু কোনো বিষয়ে অন্যকে প্রশ্ন করতে গলা কাঁপে। কিন্তু ব্যবসায়ে সফল হওয়ার জন্য প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। প্রশ্ন করতে ভয় পাবেন না। বিশেষ করে, আপনি যদি ব্যবসায়ে বা প্রতিষ্ঠানে নতুন হয়ে থাকেন। প্রশ্ন করা মানে হলো, আপনি শিখতে আগ্রহী। আর প্রশ্ন করার মাধ্যমেই অনেক কিছু জানা যায়। শেখা যায়। পথ খুঁজে পাওয়া যায়। সেজন্য তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করতে শিখুন। প্রশ্ন না করা মানে আপনি ভয় পাচ্ছেন। আর তাতে আসলে ক্ষতিটা আপনারই হচ্ছে। এটা আপনার সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে আছেন সেই অবস্থানেই থাকতে দেয়।

ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি : ব্যর্থতার মাধ্যমেই সফলতার পথ প্রশস্ত হয়ে থাকে। জীবনে যে যত বেশি ব্যর্থ বা ভুল করেছেন, সে তত বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়েছেন। আর অভিজ্ঞতা অর্জন মানেই সফলতার পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। বিশেষ করে যদি আপনি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন, তাহলে তো ব্যর্থতার মাধ্যমেই সফল হওয়ার পথ খুঁজে নিতে পারবেন। ব্যর্থতাকে যে ভয় করে সে কখনো সফল হতে পারবে না। সেজন্য ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে, সফলতার সোপান হিসেবে আকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথমত আপনি যখন ব্যর্থ হবেন তখন কিছুটা ভেঙে পড়বেন। আর প্রথম ব্যর্থতায় ভেঙে পড়াটাই স্বাভাবিক। তবে সেই ব্যর্থতার মাধ্যমে সফল হওয়ার সূত্র খুঁজে নিয়ে দ্বিগুণ বেগে পুনরায় শুরু করুন। তাহলে সফলতার পথের সন্ধান পেয়েও যেতে পারেন। ব্যর্থতাকে সফলতার ও জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ভাবুন, তবেই সফল হওয়া সহজ হয়ে ধরা দিবে।

ধৈর্যের অভ্যাস : কথায় আছে, ‘ধৈর্যের ফল তেতো হলেও মিষ্টি।’ সেজন্য ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যত তাড়াতাড়ি এই ব্যাপারটা আয়ত্ত করতে পারবেন তত তাড়াতাড়িই ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের পথ প্রশস্ত হয়ে উঠতে পারে। ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে। ব্যবসা একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এই দীর্ঘ পথে অনেক অনেক ত্রুটির সাথে সাক্ষাৎ হবে। ব্যবসায়িক দীর্ঘ পথচলায় অনেক মানুষের সাথে আপনার কথা হবে, দেখা হবে, সাক্ষাৎ হবে। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। চেষ্টা করুন তাদের সাথে পাকাপোক্ত নেটওয়ার্কিং তৈরি করতে। আর এই সবকিছুর জন্যই ধৈর্য ধরুন, মানুষকে সময় দিন।

কঠোর পরিশ্রম : প্রবাদে আছে-‘পরিশ্রমই সাফল্যের প্রসূতি।’ পরিশ্রম ছাড়া শ্রী হয় না। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই আপনাকে সাফল্যের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। আপনি যাই করুন না কেন, পরিশ্রম ছাড়া সেটার আশানুরূপ ফলাফল আশা করতে পারবেন না। যে-কোনো কাজেই পরিশ্রম অব্যাহত রাখুন। পরিশ্রম অব্যাহত থাকলে কাজও তার গতিতে চলবে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেকে উন্নত করতে চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত চাপ নেবেন না : কঠোর পরিশ্রম করুন; কিন্তু অতিরিক্ত চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সামান্য পরিমাণ মানসিক চাপ যদিও ইতিবাচক প্রভাবে সামনে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু এটা কখনোই অতিরিক্তভাবে নিতে নেই। মনে রাখবেন, সবকিছুর মতো ব্যবসায়িক উন্নয়নে সফল হওয়ার চাবিকাঠিরও একটি উপায় নিজের যত্ন নেওয়া। মানসিক চাপ অল্প ভালো; কিন্তু খুব বেশি না।

শেখা বন্ধ করবেন না : একজন শিক্ষার্থী হওয়া যে-কোনো সফল ব্যবসায়িক ডেভেলপারের বড় সম্পদ। দশকের পর দশক ধরে ব্যবসা করে থাকলেও নিজেকে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করুন। কারন একমাত্র শেখার মানসিকতাই আপনার সমবয়সিদের থেকে আপনাকে আলাদা করে দিতে পারে। বই পড়ুন, মানুষের সাথে কথা বলুন, প্রার্থনা করুন। মোটকথা আপনার চারপাশ থেকে নিয়মিত শিখতে চেষ্টা করুন।

টার্গেট জানুন : ইতোমধ্যে কাজ করছেন কিংবা নতুন চাকরি খুঁজছেন, সবসময় নিজের টার্গেট মাথায় রাখুন। আপনি ঠিক কি উদ্দেশ্যে শুরু করছেন তা সঠিকভাবে জানুন। তাতে আপনার জীবনে সাফল্যের পথ হাঁটা অনেক সহজ হবে। কে বা কি আপনার টার্গেট তা বুঝতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজন সময় ব্যয় করুন। ক্রমাগত এই নিয়ে চিন্তা করুন।

প্রতিদিন নিজেকে উদ্বুদ্ধ করুন : সময়টা খারাপ কিংবা দিনটি পক্ষে নয়। তাই বলে আশাহত বা হতাশ হবেন না। সব সময় মাথায় রাখবেন, মানুষ আপনাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করবে না। এমন একটি বিষয় খুঁজুন যা আপনাকে প্রতিদিন সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

সুযোগ আসবে : ব্যবসায়িক উন্নয়নে সফল হওয়ার জন্য, প্রতিদিন ভালো বা উন্নতি হওয়ার দিকে মনোযোগ দিন, যা আপনার পক্ষে সম্ভব, যা করার ক্ষমতা আছে তাই করুন। তারপর সময়, শ্রম দিতে থাকুন। ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যান, দেখবেন সফল হওয়ার পথের সন্ধান পেয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads