• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমেছে

সংগৃহীত ছবি

ব্যবসার খবর

অর্থবছরের শুরুতে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা

জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমেছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০২১

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ধীরগতি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে কম প্রায় ৩৯ শতাংশ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। আর গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। তবে অর্থনীতির প্রধান সূচকের এই ধীরগতিতে মোটেই উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর দুই ঈদের পর রেমিট্যান্স কিছুটা কমে। জুলাই মাসেও তাই হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের আগে ১৯ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই) ১৫৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পর মাসের বাকি ১১ দিনে (২০ থেকে ৩১ জুলাই) এসেছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ ডলার।

এই তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারের মতোই ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি ছিল; ঈদের পরে নিম্নগতি হয়েছে। আমরা আশা করছি, সামনের মাসগুলোতে তা আগের মতোই বাড়বে।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের পর রেমিট্যান্স কম আসে এটা ঠিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে অনন্তকাল ধরে প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন, এটার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, কোভিডের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসছে না। সেটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। সে কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছিল। প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। আমাদের একটা বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বৈশ্বিক কোনো কারণ নেই। বেড়েছে দেশীয় কারণে। সেটা হলো অবৈধ চ্যানেল (হুন্ডি) বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে যারা আয় পাঠাচ্ছেন, সবই বৈধ পথে আসছে। প্রকৃতপক্ষে করোনায় আয় আসা কিন্তু কমেছে। কারণ, প্রবাসীদের আয় কমে গেছে। এখন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, অনেক শ্রমিক চলে এসেছেন। আবার যাওয়াও কমে গেছে। এভাবে চললে প্রবাসী আয় কমে যেতে শুরু করবে।

করোনা মহামারির মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনোই আসেনি। জুলাইয়ের রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ২২ লাখ ডলার।

বেসরকারি ৪০ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪০ কোটি ১২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

২১ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে ১৯ জুলাই ছিল ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস।

মহামারির মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স এসেছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে ২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার করে এসেছে।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে।

ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর আর রেমিট্যান্স কমেনি, প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে ২০২০ সাল শেষে দেখা যায়, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পরে অবশ্য বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ছয়টি কারণ খুঁজে বের করে এই সংস্থাটি। কারণগুলো হচ্ছে, সঞ্চয় দেশে পাঠানো, বৈধ পথে অর্থ পাঠানো, পরিবারের প্রতি সহানুভূতি, নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় বা আর্থিক প্রণোদনা এবং বড় দেশের প্রণোদনা অর্থ।

গত ১৩ জুলাই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

কোরবানির ঈদের ছুটির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০ শতাংশ।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ২৯ জুন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৬ বিলিয়ন (৪ হাজার ৬০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গত কয়েক দিনে তা বেড়ে ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads