আর মাত্র তিন দিন পর অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গত বছর পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা হওয়ার কথা থাকলে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। চলতি বছরের অক্টোবরে পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন চলছে সৌন্দর্য বর্ধন ও স্টল প্রস্তুতের কাজ। এ নিয়ে দর্শনার্থী ও সাধারণ মানষের মাঝে আগ্রহ ও উন্মাদনার কমতি নেই। মেলা প্রাঙ্গণে চলছে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে এখনো প্রস্তুত নয় চারপাশের যাতায়াত পরিবেশ। ইতোমধ্যে সড়কগুলো হয়ে পড়েছে খানাখন্দকে ভরপুর।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল-র ৪ নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর রোডের ০০২ নম্বর প্লটে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। মোট ৩৫ একর জমির ২৬ একরের ওপর নির্মাণাধীন এই সেন্টারে আধুনিক কার পার্কিং, সম্মেলনকক্ষ, সভাকক্ষ, প্রেস সেন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র, আধুনিক সুবিধা সংবলিত ডরমিটরি রয়েছে। এছাড়া এক্সিবিশন সেন্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক সিসি টিভি ক্যামেরা, আধুনিক ব্যবস্থাসহ বিদ্যুতের নিজস্ব সাব সেন্টার, সার্ভিস রুম, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, কালভার্ট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকা থেকে ৩শ ফুট সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। এতে উভয়পাশে দীর্ঘদিন ধরে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়কে যাতায়াতকারীরা। আবার পূর্বাচলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক নামে পরিচিত ঢাকা বাইপাস রোডের ৪ লেনে উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে পুরনো ২ লেনের সড়কটিতে মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় নিত্য যানজট চিত্র এখানকার ভোগান্তির কারণ। এমন পরিস্থিতিতে পূর্বাচল ৪নং সেক্টরেরর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত হচ্ছে মেলার স্টল।
এবারের মেলায় চলাচলের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে বিআরসিটিসির বাস চলবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্বাচলের রাস্তা সংস্কার করে চলাচলের জন্য উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গুতিয়াবো এলাকার বাসিন্দা রাসেল মাহমুদ জানান, অপেক্ষার প্রহর শেষে করোনা মহামারি পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী বছরের প্রথম দিনেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এবারই প্রথম গ্রামের লোকজন সরাসরি সুযোগ পাচ্ছে এ মেলার সুবিধা নিতে। তবে রাস্তাঘাটের বেহালদশার কারণে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে যাওয়ার পথে সড়কের দুর্দশা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি পূর্বাচলের রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শুনেছি। তবে আশার আলো এখনো দেখছি না। যাতায়াত ভোগান্তি থাকলে দর্শনার্থী আসবে কম। বিক্রেতা ও পণ্য প্রদর্শনীর লোকজন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই উৎসবমুখর পরিবেশের বিকল্প নাই। তবে এ বছর কিছুটা কষ্ট হলেও পরবর্তী বছরে সেই ভোগান্তি আশাকরি আর থাকবে না।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, সম্প্রতি রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ও ইপিবির কর্মকর্তারা মিলে সভা করেছি। সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১৩ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী করার সিদ্ধান্ত হয়। যা ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দুই লেন করে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে।
মেলা আয়োজক কমিটির পরিচালক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বানিজ্য মন্ত্রণালয় মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী (সচিব) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি ভার্চুয়ালি মেলা উদ্বোধন করবেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা হবে। যাতায়াত ভোগান্তি এ বছর কিছুটা থাকতেই পারে। তবে ‘আমরা বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত শাটল সার্ভিস চালু করার জন্য। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে ১৬০০ শত পুলিশ সদস্য।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছরই অস্থায়ীভাবে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। টানা ১ মাস এই মেলার কারণে সৃষ্টি হতো দীর্ঘ যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়তো রাজধানীবাসী। স্থায়ী প্যাভিলিয়ন হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে মোট ব্যায় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।