• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

বিনোদন

পদ্মাবত নিয়ে কেন এত দাঙ্গা-হাঙ্গামা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

মাসের পর মাস প্রতিবাদ বিক্ষোভের পর বলিউডের বিগ-বাজেট ছবি পদ্মাবত বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছে। কেন ইতিহাসভিত্তিক এই ছবি নিয়ে কট্টর হিন্দু কিছু দল এবং রাজপুত গোত্রের লোকজন এতটা ক্ষেপে উঠেছে?

আপত্তি কি নিয়ে?

পদ্মাবত ছবির গল্প চতুর্দশ শতাব্দীর একজন রাজপুত গোত্রের হিন্দু রানী এবং একজন মুসলিম সম্রাটকে নিয়ে।

ছবির গল্প এরকম- হিন্দু রাজপুত রানী পদ্মাবতীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে দিল্লির তৎকালীন মুসলিম সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি ঐ রাজ্য আক্রমণ করে।

হিন্দু দলগুলোর অভিযোগ, ছবিতে স্বপ্নের অজুহাতে আলাউদ্দিন খিলজির সাথে রানী পদ্মাবতীর ঘনিষ্ঠ রোমান্টিক একটি সিকোয়েন্স রয়েছে। অবশ্য ছবির পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালি তা অস্বীকার করেছেন।

তবে ঐ গুজবেই আগুনের মত বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ভারতের বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে।

নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু সময় পর, ছবিটি বৃহস্পতিবার মুক্তি পেলেও, আগের দিনই গুজরাট, হরিয়ানাসহ বেশ কটি রাজ্যে ভাঙচুর জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। সেই ভয়ে, চারটি রাজ্যের সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি মুক্তি দেননি। 

ছবির কাহিনী কি সত্যিকারের ইতিহাস?

খিলজি একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। কিন্তু বহু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, পদ্মাবতী নেহাতই একজন কাল্পনিক চরিত্র। ষোড়শ শতাব্দীর মুসলিম কবি মালিক মহম্মদ জয়সির কাব্যে কল্পিত এক রাজপুত রানী তিনি।

কবিতায় রয়েছে - ঐ যুদ্ধে তার স্বামী খিলজির হাতে নিহত হওয়ার পর সম্ভ্রম রক্ষায় রানী পদ্মাবতী চিতায় উঠে আত্মহত্যা করেন।

রাজপুত গোত্রে সে সময় স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীদের চিতায় উঠে আত্মহত্যা করার চল ছিল। ১৮২৯ সালে ইংরেজরা আইন করে সেই সতী-প্রথা নিষিদ্ধ করে।

ইতিহাসবিদরা বলেন, সাতশ বছর আগে খিলজির চিতোর রাজ্য অভিযানের যে ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে, জয়সির কাব্য লেখা হয়েছে তার দুশ’ বছর পর। তারা বলেন, পদ্মাবতীকে ঘিরে যে রূপকথা পর্যায়ক্রমে তৈরি হয়েছে, বর্তমানের এই বিপত্তির মূলে রয়েছে সেটাই।

কত ব্যাপক এই বিক্ষোভ?

বিপত্তির শুরু গতবছর জানুয়ারি মাসে যখন রাজস্থানে ছবির শুটিং চলাকালে কার্নি সেনা নামে কট্টর একটি রাজপুত সংগঠনের লোকজন সেটে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং ছবির পরিচালককে মারধর করে।

পরে, নভেম্বরে এই বিক্ষোভ বিজেপি শাসিত বেশ কটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে যখন ঘোষণা করা হয় পহেলা ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে।

কার্নি সেনা ছবির নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়, যেভাবে রামায়ণে রাবনের বোন শূর্পনখার নাক কেটে দেওয়া হয়েছিল।

আঞ্চলিক এক বিজেপি নেতা এমন ঘোষণাও দেন যে, কেউ যদি মি. বানসালি এবং মিস পাড়ুকোনের মাথা কেটে আনতে পারে, তাকে ১৫ লাখ ডলার পুরষ্কার দেওয়া হবে।

এরপর চারটি রাজ্য - রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ছবিটি মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।

তবে সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশনা স্বত্বেও হিন্দু কট্টরপন্থী বিভিন্ন সংগঠন গত কদিন ধরে প্রায় বিনা বাধাতেই সহিংস বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

ভয়ে, ভারতের চারটি রাজ্যে - রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও গোয়া সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি দেখাচ্ছেন না।

 

 

[বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া] 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads