• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

মাটির প্রজার দেশে সিনেমার একটি পোস্টার

ইন্টারনেট

বিনোদন

ফিল্ম রিভিউ ‘মাটির প্রজার দেশে’

মৌলিক গল্পের উদাহরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ মার্চ ২০১৮

আল কাছির

‘আমি আর ফুলবাড়ি থাকুম না। এইহানে কেউ আমারে ভালোবাসে না।’ জামালের এমন সংলাপ যে শেষে সত্যি হবে সেটা ভাবা যায়নি। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সমাজের কিছু মানুষের হীনমন্যতার কারণে সেটাই ঘটেছে জামালের ক্ষেত্রে। তবুও জামাল বেড়ে উঠেছে নতুন গ্রামে। নতুন পরিবেশে। নতুন পরিচয়ে।

বলছিলাম বিজন ইমতিয়াজ পরিচালিত ‘মাটির প্রজার দেশে’ ছবির কথা। আরিফুর রহমান প্রযোজিত এ ছবিটি আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত। শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম হওয়া এ ছবিতে অভিনয় করেছেন-অনিন্দ্য, শিউলি আক্তার, রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়, মনির আহমেদ শাকিল, কচি খন্দকার প্রমূখ।

গল্পে দেখা গেছে, পিতৃপরিচয়হীন ১০ বছরের জামাল। তার খেলা সাথী লক্ষ্মীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে চায় সে। কাজ বাদ দিয়ে পড়াশুনা করতে চায়। মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে স্কুলে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু পিতৃপরিচয় না থাকায় স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। এক পর্যায়ে স্কুলে ভর্তি হলেও স্কুলের পিয়নের চক্রান্তে তার মা বেশ্যা উপাধি পায়। বাধ্য হয়ে গ্রাম ছাড়া হয় জামাল ও তার মা। ছবির শেষে জামাল ঠিকই স্কুলে ভর্তি হয়। পিতৃপরিচয় নিয়েই।

ছবির শুরুতেই নড়েচড়ে বসতে হলো, কারণ সব উল্টে পাল্টে দিচ্ছে জামাল চরিত্রে অভিনয় করা অনিন্দ্য, আর খেলার সাথী লক্ষ্মী চরিত্রে অভিনয় করা শিউলি। ধান মাড়াই চলছে, লক্ষ্মীর মুখে এসে পড়ছে খড়। গল্পের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রের ইন্ট্রো শট এতো চমৎকার হতে পারে সেটা ছবিটি না দেখলে বুঝা যাবে না।

পুরো ছবির মিজ-অঁ-সেন খুবই চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। শিল্প নির্দেশক অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। বিশেষ করে গম ক্ষেতের শটগুলো। গম কাচা থেকে পাকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে টিম। ছবিটি দেখলেই বুঝা যায়। জামালের বয়সের ব্যবধান বুঝানোর জন্য পরিচালক হয়ত ১ বছর অপেক্ষা করেছেন। ১০ বছরের জামাল যে ১১ বছরে পা রেখেছে সেটি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতে পারা গেছে।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফিও অসাধারণ। ন্যারেটিভ স্টাইলও ভালো লেগেছে। ছবির মন্তাজ ছিল দারুণ। সম্পাদনার টেবিলে নিখুঁত মালা গেঁথেছেন সম্পাদক। জাম্প কাট গুলো চোখে পড়ার মতো ছিল। ছবির ডিটেইলে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক সিম্বলিজমের মাধ্যমে। যেমন, লক্ষ্মীর বিয়ের দিন মুরগী জবাই করা, লক্ষ্মীর স্বামীকে ডিম খেতে দিতে না পারা, জামালের মায়ের কাটা মাছ বটিতে লেগে থাকা। ছবিতে জামাল আর লক্ষ্মীর গম ক্ষেতে দৌড়ানোর দৃশ্যে মাথায় চলে আসে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবির অপু-দুর্গার কাশবনে দৌড়ানোর দৃশ্যটি।

সমাজের সাধারণ গল্পকে অসাধারণ ভাবে পর্দায় তুলেছেন পরিচালক। যারা মৌলিক গল্প নিয়ে যুদ্ধে নামেন তাদের জন্য এই গল্পটি উদাহরণ হতে পারে। বাংলা চলচ্চিত্রের পরিবর্তন যারা আনতে চান, তাদের জন্য এ ছবিটি উদাহরণ হতে পারে। ছবিটি আরো বেশি হলে মুক্তি পেতে পারত। সেটি না পাওয়ার অন্যতম কারণ, আমাদের দেশের পরিচালকরা ফিচার ফিল্মের দর্শক তৈরি করতে পারেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পরিবর্তন আনতে হলে এ ঘরানার ছবিগুলোতে পৃষ্ঠপোষকতা করা জরুরি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads