• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

আলফ্রেড যোসেফ হিচকক

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

দ্য মাস্টার অব সাসপেন্স

  • রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০১৮

খারাপ ব্যবহারের জন্য মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাকে পুলিশের কাছে প্রেরণ করেন তার বাবা। শাস্তি হিসেবে পাঁচ মিনিট বন্দি করে রাখার জন্য। অল্প বয়সে এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতাকে পরবর্তী সময় কাজে লাগিয়েছেন তিনি। তার চলচ্চিত্রগুলোতেও উঠে এসেছে আতঙ্ক আর রহস্য। তিনি পেয়েছেন ‘দ্য মাস্টার অব সাসপেন্স’ উপাধি। তিনি হলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আলফ্রেড যোসেফ হিচকক।

রহস্য এবং হিচকক। দুটোই একে অপরের সমার্থক। সেলুলয়েডের রহস্যময় জগতের রাজা তিনি। যারা সাইকো থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র পছন্দ করেন তাদের কাছে আলফ্রেড হিচকক পরিচিত নাম। তার জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট। ইংল্যান্ডের রোমান ক্যাথলিক বাবা-মায়ের দ্বিতীয় ছেলেসন্তান তিনি। জিসুইট ক্লাসিক স্কুল, সেন্ট ইগনাতিয়াস কলেজ ও সালেসিয়ান কলেজ থেকে শিক্ষাজীবন পার করেন হিচকক।

১৯২০ সাল। হিচকক আগ্রহী হয়ে ওঠেন ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্রের প্রতি। কাজ শুরু করেন লন্ডনের ফিল্ম প্রোডাকশনে। টাইটেল কার্ড ডিজাইনের কাজ করেন প্যারামাউন্ট পিকচারের লন্ডন শাখা। এরপর চাকরি নেন ইসলিংটন স্টুডিওতে। টাইটেল কার্ড ডিজাইন করতে করতেই চিত্রপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তিনি।

সবাক ও নির্বাক দুই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণে রয়েছে তার সফলতা। জীবদ্দশায় তিনি পঞ্চাশটির অধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার চলচ্চিত্রের প্রধান উপাদান ‘রহস্যময়তা’। রহস্যময়তাকে ঘিরেই তিনি নির্মাণ করেছেন নান্দনিক চলচ্চিত্র। থ্রিলিং এবং সাসপেন্স ছবির পথপ্রদর্শকও বলা হয় তাকে।

বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলফ্রেড হিচকক নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টি করে গেছেন। তার চলচ্চিত্রের কাহিনীতে এ ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। উদ্বেগ, ভয়, ভীতি, উত্তেজনার সংমিশ্রণ ছিল তার চলচ্চিত্রের প্রতিটি ফ্রেমে। কাহিনী আর ক্যামেরাওয়ার্ক দিয়ে দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

ব্রিটেনের প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিচকক। ১৯২৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাকমেইল’। এরপর নির্মাণ করেছেন—‘সাইকো’, ‘ফ্যামেলি প্লট’, ‘ভার্টিগো’, ‘নর্থ বাই নর্থ ওয়েস্ট’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের ব্যাপারে হিচককের নিজস্ব মতামত ছিল। তার মতে, ‘আমি চলচ্চিত্রের গল্প এমনভাবে সাজাই যা দেখে দর্শক যেন দোটানায় ভোগে। নাটকীয়তা বাদে চলচ্চিত্র একদম প্রাণহীন।’

‘সাইকো’ চলচ্চিত্রটিতে হিচকক নিজের দর্শনই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মানসিক বিকারগ্রস্ত এক খুনির গল্পে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। মেরিয়ন ক্রেনের চল্লিশ হাজার ডলার চুরির মাধ্যমে ছবির রহস্যের শুরু। বয়ফ্রেন্ডের ঋণের টাকা শোধ করার জন্য অফিসের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মেরিয়ন। নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দোটানার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। হিচককের মতে ‘সাইকো’ একটি কমেডি চলচ্চিত্র। কমেডির সঙ্গে ব্যতিক্রম কিছু উপস্থাপন করেছেন তিনি। এটাই তার মুন্সিয়ানা। চলচ্চিত্রের এমন সব কাহিনী নিয়ে খেলা হিচকককে করেছে সবার থেকে আলাদা।

১৯৩৯ সালে পুরো পরিবার নিয়ে হলিউডে যান হিচকক। শুরু হয় তার হলিউড জীবন। ১৯৪০ সালে মুক্তি পায় তার হলিউডে প্রথম চলচ্চিত্র ‘রেবেকা’। অস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছিল এটি। এরপর হলিউডে মুক্তি পায় তার ক্ল্যাসিক সব চলচ্চিত্র। ‘লাইফবোট’, ‘স্পেলবাউন্ড’, ‘নটোরিয়াস’, ‘রোপ’, ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ ইত্যাদি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

তিনি শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন। একজন সুলেখকও বটে। তার প্রথম লেখা ‘গ্যাস’। ১৯১৯ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রথম সঙ্কলনে। তার সর্বশেষ লেখা ছিল ‘ফেডোরা’। হিচককের লেখাগুলো ছিল নারীকেন্দ্রিক। তার অধিকাংশ চলচ্চিত্রের কাহিনীও আবর্তিত হয়েছে নারীকে নিয়ে।

১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান হিচকক। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে রানি এলিজাবেথের কাছে ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেছিলেন তিনি। বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসে তার দর্শন আজো স্মরণীয়। দর্শক-নির্মাতার মনে ‘দ্য মাস্টার অব সাসপেন্স’ হিসেবেই অমর আলফ্রেড হিচকক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads