• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
‘কবিরাই শ্রেষ্ঠ গীতিকার’

কবি কাজী রোজী এমপি

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

‘কবিরাই শ্রেষ্ঠ গীতিকার’

  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০১৮

কবি কাজী রোজী এমপি। তার অনেক পরিচয়ের মধ্যে ‘গীতিকার’ অন্যতম। তার লেখা প্রায় পাঁচশ’ গানের সুর হয়েছে। শিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন। সম্প্রতি গানের গল্প করার জন্যই তার সঙ্গে আড্ডার আয়োজন হয়েছিল। গানের গল্পই বলে গেলেন কবি। সে গল্প কিছুটা বিচ্ছিন্ন, তবে সবটা মিলিয়ে অর্থপূর্ণ উঠল। জানাচ্ছেন সোহেল অটল

‘এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে/দেহের মাপের মাটির ঘরে শুতে হবে’- মাকসুদুল হকের গাওয়া এই গানটা কবি কাজী রোজির ভীষণ প্রিয়। গানটা তারই লেখা।

ইদানীং ৭২ বছর বয়সী এই কবি চলে যাওয়ার কথা ভাবেন খুব। তবে চলে যাওয়ার আগে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে রেখে যাওয়াটাও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জীবন তো একটাই। তাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারাটা জরুরি।

কাব্যশ্রী কাজী রোজীর অনেকগুলো পরিচয় রয়েছে। গীতিকার পরিচয়টা তার মধ্যে অন্যতম। গানের মধ্যে তিনি তার যাপিত জীবনের গল্প, দর্শন বুনে গেছেন শ্রোতাদের কানে কানে। তার লেখা প্রায় পাঁচশ’ গান গেয়েছেন দেশের নামি-দামি কণ্ঠশিল্পীরা। এখনো লিখে চলেছেন।

এই যে কবিতা লিখতে লিখতে গান লেখার প্রতি ঝুঁকে পড়া- এটা নিয়ে কাজী রোজীর একটা ব্যাখ্যা আছে। ‘আদিযুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিককালে যারাই কবিতা লিখেছেন, তাদের কবিতা গান হয়ে গেছে। মধ্যযুগের পদগুলো সবই প্রায় গান। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসসহ আরো যারা, তাদের পদগুলো তো গানই। সেজন্যই বলা হয় মধ্যযুগের গীতিকবিতা।’ নিজের গান লেখা নিয়ে এভাবেই ব্যাখ্যা দিলেন কাজী রোজি। তিনি বলেন, ‘আমি যখন বাংলায় পড়াশোনা করেছিলাম, তারও আগে থেকেই এই জিনিসগুলো নিয়ে ভেবেছি। এবং তখন আমি মনে করেছিলাম আমি যা লিখব, বলব- তাও তো গান হতে পারে। কবিতার একটা ধারা থাকবে। গানের একটা ধারা থাকবে।’

থামলেন কবি। ঠিক পর পরই বললেন, ‘কবিরাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ গীতিকার।’

কবি কাজী রোজির গান লেখা শুরু অনেক আগে। ‘খুকুরে তোর কান্না থামা, কান্না থামা’ কথার সেই গানটি গেয়েছিলেন সামিনা চৌধুরী। ঠিক কবে, কখন সে গানের রেকর্ডিং, তা আর আজ মনে নেই। মনে না থাকারই কথা। ৭২ বছর বয়সী এই কবি গত ২৫ বছর ধরে লড়াই করছেন ক্যানসারের সঙ্গে। ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর প্রতিযোগীকে ২৫ বছর ধরে দাবিয়ে রেখে জীবনকে যাপন করে চলেছেন। তথ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে অবসরের পর রাজনীতিতেও পুরোদমে সক্রিয় হয়েছেন। বর্তমান সংসদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এত কিছুর মধ্যেও ক্যানসার তার কিছুটা ক্ষতি তো করেই দিয়েছে। ২৫ বছর ধরে ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির মতো চিকিৎসা তো আছেই, তার বাইরে এখনো রয়েছে নিয়মিত ওষুধ সেবন। এসব কারণে স্মৃতিও যখন-তখন বেইমানি করে বসে। ঠিকঠাক মনে করতে পারেন না, কবে কোন কাজটা করেছিলেন। তবুও স্মৃতি হাতড়ে যতটা বলতে পারছেন, সেটাও কম নয়।

রেডিওতে নিয়মিত তার কাছ থেকে গান নিয়ে সুর করেছেন একাত্তরের আগে-পরের সুরকাররা। আজাদ রহমান, সুবল দাস, মাহমুদুন্নবী, রাজা হোসেন খান, আলাউদ্দীন আলী, শেখ সাদী খান, লাকি আখান্দসহ অনেক বিখ্যাত সুরকারের হাতে তার লেখা গান হয়ে উঠেছে। তার লেখা গান গেয়েছেন বশির আহমেদ, কল্যাণী ঘোষ, আবদুল হাদী, আবিদা সুলতানা, ফেরদৌসী রহমান, সামিনা চৌধুরী, তপন চৌধুরী, মাকসুদুল হক, সুবীর নন্দী, শাকিলা জাফর, পারভীন মুস্তারী, শাহবুদ্দীন নাগরী থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রজন্মের বিপ্লব (প্রমিথিউস), রবী চৌধুরীরাও।

মূলত রেডিও-টিভির জন্য নিয়মিত লিখতেন। পাশাপাশি অডিও অ্যালবামের জন্যও তার কাছ থেকে গীতিকবিতা চেয়ে নিতেন সুরকাররা। এখনো এ ধারা অব্যাহত।

কবি কাজী রোজী মননে, চিন্তায় আপাদমস্তক আধুনিক মানুষ। গানপাগল এই মানুষটা প্রচুর গান শুনেছেন। এখনো শোনেন। বর্তমান সময়ের গানও তিনি সময় পেলে শুনে থাকেন। সুতরাং বর্তমান সময়ের গান নিয়ে তার মূল্যায়নটাও শুনে রাখা জরুরি। ‘ভালো গান হচ্ছে। এখনকার তরুণেরা বেশ মেধাবী। আমার ভালো লাগে তাদের সৃজনশীল কাজ দেখে।’ এক কথায় বলে দিলেন।

গীতিকারদের আড়ালে পড়ে থাকা নিয়ে একটা হইচই আছে সঙ্গীতাঙ্গনে। তাই নিয়েও মন্তব্য জানালেন কবি কাজী রোজী। বললেন, ‘গীতিকার সব সময়ই নেপথ্যে কাজ করে যান। সুতরাং তার আড়ালে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রত্যেককেই তার যোগ্য সম্মানটুকু বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। যখন রেডিও-টিভিতে একটা গানের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পীর নাম বলা হয়, তখন গীতিকার-সুরকারের নামটাও উচ্চারিত হওয়া উচিত।’

একাত্তরের শব্দসৈনিক কাজী রোজী মনে করেন, গান হচ্ছে জীবনবোধ। গান হচ্ছে চলমান অস্তিত্ব। জীবনের কথাই গানে গানে বয়ে যায় যুগ-যুগান্তরে। ঠিক যেমন করে তিনিও বলে চলেছেন প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে।

কবি কাজী রোজীর নিজের লেখা প্রিয় ১০ গান

এমনি করে সবাই যাবে যেতে হবে- মাকসুদুল হক
আমার দোষে কারো নাকি কপাল পুড়েছে- আবিদা সুলতানা
আয়নায় রেখে মুখ বারবার নিজেকে দেখার বয়সটা সবে ছুঁয়েছিল- বিপ্লব (প্রমিথিউস)
যুদ্ধের স্মৃতি ছাড়া কোনো স্মৃতি মনে নেই- আবদুল হাদী
এ তোমার জানবার কথা নয়- শাকিলা জাফর
কাল সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি- মাহমুদুন্নবী
যতই পুরনো হোক বলতেই হয়, ভালোবেসে জ্বলতেই হয়- শাহাবুদ্দীন নাগরী
সুখ আমার বেনারসি ঘোমটা- আঞ্জুমান আরা
ভালো নেই তবু মিছে ভালো আছি বলা- বশির আহমেদ
সেই কালরাত্রির ঘটনাটা- সামিনা চৌধুরী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads