• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো গানের পুরুষ

নগর বাউল জেমস

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো গানের পুরুষ

  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

বাউল বলতে আমরা সাধারণত গাঁয়ের পথ ধরে একতারায় সুর তুলে ডুগডুগি বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে যাওয়া ঘর বিবাগী গায়ককে বুঝি। যার গান আপন করে নিয়েছে মেঠোপথ, ধানক্ষেত ও মাটির ঘরকে। যাকে পেতে হলে মেঠোপথের কিনার ঘেঁষে শুয়ে থাকা গাঁয়ে যেতে হয়, নগরে যার সন্ধান পাওয়া খুবই দুরূহ। তবে আমাদের ইট-কাঠের এই নগরেও একজন বাউল বাস করেন। তবে তিনি একতারা বাজিয়ে গান করেন না। তিনি সুর তোলেন গিটারে।

গিটারের ছয় তারে তাল তোলা পশ্চিমা ও দেশজ সংমিশ্রণে তৈরি সুরের মায়াবি ঝঙ্কারে বহুদিন ধরে বুঁদ হয়ে আছে আমাদের নগর, আমাদের গ্রাম তথা এই বদ্বীপ। যিনি গানে জীবনের কথা বলেন, মাটির কথা বলেন। যার গানে আমরা খুঁজে পাই একজন জুয়াড়ির গল্প, ফুটে উঠে বিবাগীর কথা। যার গানকে আপন করে নিয়েছে মাটির ঘর থেকে শুরু করে অট্টালিকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলো। গায়ের মেঠোপথ থেকে নগরের পিচ ঢালা রাজপথও আপন করে নিয়েছে তার গান। তিনি নগর বাউল। তিনি ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো গানের পুরুষ জেমস। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের এক কিংবদন্তি প্রবাদপুরুষ। তিনি গুরু।

আজিজ বোর্ডিং থেকে জেমস তার জার্নিটা শুরু করেছিলেন। আজ বলিউডেও বিস্তৃত তার রাজত্ব। ইস্টিশন রোড থেকে হাঁটতে হাঁটতে বেবাসীতে তিনি চলে গিয়েছেন জলের তলদেশে। জলে স্থলে সর্বত্রই রেখেছেন স্বপ্রতিভার স্বাতন্ত্র্য স্বাক্ষর। কেননা তিনি সবার চেয়ে আলাদা। তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই তাকে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে তার সমসাময়িক কিংবদন্তিদের ছাপিয়ে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে আজকের এই আকাশসম উচ্চতায়। যে উচ্চতা দেখতে হলে মাথা উঁচু করে ওপরের দিকে তাকাতে হয়। কি নেই তার গানে? তার গান মা হারা, বাবা হারা সন্তান, প্রেমিকা হারা প্রেমিক, তারায় তারায় প্রেমিকার কথা রটিয়ে দেওয়া পাগলপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক বাঙালিসহ সকল শ্রেণির নাগরিকের সুখ অথবা দুঃখ খুঁজে পাওয়ার আশ্রয়স্থল।

তার গানে আছে ইস্টিশন রোডের নগর নটির কথা, আছে সেলাই দিদিমনির শ্রম ও ঘামের গল্প, আছে বেদের মেয়ের উপাখ্যান, আছে শোকে পাথর হয়ে কান্না বিমুখ মানুষের গল্প, ‘কান্নায় লাভ নেই, কান্নায় হবে না/কোনোদিন পদ্মা মেঘনা’। কার কথা বলেননি জেমস? এমনকি কনডেম সেলে বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামির কথাও বলেছেন তিনি তার গানে। তার সমসাময়িক কিংবা তার পরবর্তী কোনো ব্যান্ড শিল্পীর গানে এত বৈচিত্র্য আমি খুঁজে পাইনি, এত গভীরতাও খুঁজে পাইনি। তার দরাজ কণ্ঠের গান যেন এদেশের প্রতিটি তরুণের প্রাণ ধরে টান দেয়। তার দরাজ কণ্ঠের আহ্বান ‘আমার দুষ্ট ছেলের দল কইরে’ যেন কোটি তরুণের তারুণ্যে একসঙ্গে ড্রামের দ্রিম দ্রিম উন্মাদনা জাগিয়ে তোলে।

বাংলা সঙ্গীতের একমাত্র রকস্টারের কথা যদি বলি তবে জেমসের কথাই বলতে হবে। যার গানে পাওয়া যায় কলিজা পোড়া ঘ্রাণ। ভালো থাকুন রকস্টার। একই পথে থাকুন রকস্টার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads