• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
মঞ্চনাটকে মৌলিক গল্পের সংকট

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

মঞ্চনাটকে মৌলিক গল্পের সংকট

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২১

নব্বই দশকের দিকে সাদা-কালো টিভির পর রঙিন টিভি এলো। বিটিভি ছিল তখন মূল আকর্ষণ। আর কোনো কিছুই তখন ছিল না। সময়ের সাথে ডিশের বাইরের চ্যানেলগুলো মানুষ দেখা শুরু করল। পাশাপাশি দেশীয় অনেক বেসরকারি চ্যানেলে মানুষ নাটক, সিনেমা দেখা শুরু করল। এদিকে সিনেমা হলের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করল। সে সময় থেকেই মঞ্চ অনেক জনপ্রিয় ছিল। সময়ের পরিক্রমায় টিভি নাটক-সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শক। সুস্থ-পরিতৃপ্ত বিনোদন পেতে মঞ্চনাটককেই বেছে নিয়েছেন দর্শক। বিনোদনের সব উপাদানই যেন এখানে খুঁজে পাচ্ছেন তারা। তাই দিনকে দিন মঞ্চের আঙিনাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে দর্শকের পদভারে। মঞ্চ ফিরছে তার পুরনো আবহে। মঞ্চায়িত নাটকগুলো প্রশংসিতও হচ্ছে সর্বমহলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়াচ্ছে আমাদের মঞ্চনাটক।

যে মঞ্চ নিয়ে আমাদের এত গর্ব, সেই মঞ্চের নাট্যচর্চার অন্যতম প্রধান উপাদান পাণ্ডুলিপি নিয়ে আমাদের মূল সমস্যা। আমাদের মঞ্চে বিদেশি অনুবাদের নাটকের প্রচলন রয়েছে। তবে মৌলিক গল্পের নাটকের সংকট রয়েছে। মৌলিক গল্পের পাণ্ডুলিপির নাটক আমাদের মঞ্চাঙ্গনকে উৎসাহিত করলেও এখনো দেশীয় মৌলিক পাণ্ডুলিপির সংকট কাটেনি। একটা সময় মৌলিক পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মঞ্চসফল নাটক লিখেছেন সেলিম আল দীন, আবদুল্লাহ আল-মামুন, সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, মমতাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। তাদের অনুপস্থিতিতে তরুণ নাট্যকার গড়ে না ওঠার কারণে বিপদে পড়েছে নাট্য দলগুলোও। তারা মৌলিক পাণ্ডুলিপির সংকটে ভুগছে। মঞ্চ সচল রাখতে বিদেশি অনুবাদের নাটকের আশ্রয় নিচ্ছে নাটকের দলগুলো। গত কয়েক বছরে মঞ্চে আসা নতুন নাটকগুলোর বেশিরভাগই মৌলিক নয়। আতাউর রহমান ও অপি করিম অভিনীত এ সময়ের আলোচিত মঞ্চনাটক ‘ডিয়ার লায়ার’ বিদেশি গল্পের। নাটকটি মার্কিন লেখক জেরোম টিমোথি কিল্টির মূল লেখা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। ‘হ্যাপি ডেজ’ নাটকটি স্যামুয়েল বেকেটের। ‘মহাপতঙ্গ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আবু ইসহাকের সাহিত্যকর্ম অবলম্বনে তৈরি। এছাড়া ‘ওপেন কাপল দারিও ফো’, ‘অ্যান ইন্সপেক্টর কলস জেবি প্রিসলি’, ‘ম্যাকবেথ’ শেকসপিয়রের লেখা। এমনি মঞ্চের বহু সফল নাটক বিদেশি অনুবাদের। এমনকি মঞ্চের বহুল আলোচিত ও অধিক প্রদর্শিত ‘কঞ্জুস’ নাটকটিও বিদেশি অনুবাদের। ১৯৮৩ সালে তারিক আনাম খান ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে ‘কঞ্জুস’ নাটকটি অনুবাদ করেন। একইভাবে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ ব্রের্টল্ড ব্রেখটের গল্প অবলম্বনে আসাদুজ্জামান নূর রূপান্তরিত বাংলাদেশি মঞ্চনাটক। সাম্প্রতিক সময়ের নতুন প্রযোজনার প্রায় নাটকগুলোই বিদেশি গল্পের। নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এজন্য পাণ্ডুলিপি আর ভালোমানের নাট্যকারের অভাবকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, প্রাপ্তি নেই বলে নাট্যকাররা আর মঞ্চের জন্য নাটক লিখছেন না। তাছাড়া ভালো মানের নাট্যকার খুবই কম। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘ভালোমানের নাট্যকার আর পাণ্ডুলিপি সংকটে অনেক নাটকের দল নিজেদের টিকিয়ে রাখতে বিদেশি নাট্যকারদের নাটকের অনুবাদ বা রূপান্তরের মাধ্যমে প্রযোজনা অব্যাহত রাখছে।’ নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী নাট্যাঙ্গনে দেশি নাট্যকারদের বিশাল ভূমিকা ছিল। মুনীর চৌধুরী, নুরুল মোমেন, আসকার ইবনে শাইখের মতো নাট্যকাররা তাদের সৃজনশীলতাকে দিয়ে নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী সময় মমতাজ উদদীন আহমদ, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হকরা ভালো লিখেছেন। এরপর মানসম্পন্ন পাণ্ডুলিপি না পাওয়ায় বিদেশি নাট্যকারদের প্রতি নির্ভর হয়ে পড়তে হয়েছে। মৌলিক গল্পের নাটকের সংকট এখনো রয়ে গেছে। তবে আশা করা যায় এর পরিবর্তন হবে। কিছু তরুণ চেষ্টা করছে।’

অভিনেতা ড. ইনামুল হক বলেন, ‘আমরা সরাসরি বিদেশি নাটকের অনুবাদ করছি না, বলা যায় রূপান্তর করছি। যেমন আমাদের দলের নাটক ‘পুসি বিড়াল ও একজন প্রকৃত মানুষ’ বিদেশি নাটক হলেও সেটাকে আমরা শুধু অনুবাদই করিনি, রূপান্তরও করেছি। বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে নাটকে দেশি বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে আমাদের নাট্যকারের অভাব রয়েছে এটা ঠিক। আসলে নাট্যকাররা যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। তাদের মূল্যায়ন করা হলে তারা ভালো কাজের অনুপ্রেরণা পাবেন। তৈরি হবে নাট্যকার। আর এভাবে আমাদের পাণ্ডুলিপি সংকট কাটাতে পারি।’ রাজধানী ঢাকায় নাটক মঞ্চায়নে সম্পৃক্ত রয়েছে ২৩০টি নাট্যদল। প্রতিটি দল বছরে একটি করে নাটক উপহার দিলেও অনেক পাণ্ডুলিপি পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন নাট্যবোদ্ধারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads