• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিস্ময়কর পৃথিবীর অজানা কিছু তথ্য

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিস্ময়কর পৃথিবীর অজানা কিছু তথ্য

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৫ মে ২০২২

ধরুন কোনো এক মরুভূমির প্রান্তে নিয়ে গিয়ে আপনাকে বলা হলো জায়গাটি আমাজন। অথবা অন্ধকার গুহায় ঢুকে দেখতে পেলেন সবুজ-নীলাভাব প্রাকৃতিক ঝাড়বাতি। কিংবা কোনো এক হোটেলে গিয়ে দেখলেন তা সম্পূর্ণ লবণের তৈরি। এমনকি যে চেয়ারে আপনাকে বসতে দেওয়া হলো তাও লবণের। কি খুব বেশি অবাক হবেন?

রহস্যময় এই পৃথিবীতে অবাক করা কত কিছুই না ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে এর অনেক কিছু সম্পর্কে জানা গেলেও বেশিরভাগ বিষয়ই আমাদের অজানা। এমনই জানা-অজানা বিস্ময়কর কিছু তথ্য সম্পর্কে চলুন জেনে নেই-

আয়না ভূমি : দক্ষিণ বলিভিভয়ার মরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল আয়না ভূমি ‘সালার দে ইউনি’। ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটারের এই আয়না ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ হাজার ৫৬৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। মূলত মিনচিন হ্রদের পানি শুকিয়ে এই সমতল ভূমির সৃষ্টি। শুকনো হ্রদের তলানির লবণ ও লিথিয়ামসহ বহু খনিজ পদার্থ মজুত আছে এখানে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত স্থায়ী হয় এখানে। আর বৃষ্টি হলে লবণের ভূমি এতোটাই স্বচ্ছ দেখায় যে সেসময় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়নায় পরিণত হয়। লবণে এই ভূমি পর্যটকদের জন্য সারা বছরই উন্মুক্ত থাকে। ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রয়েছে উন্নত যাতায়াতব্যবস্থা। রয়েছে বিভিন্ন হোটেল। অবাক করার বিষয় এই যে, ২০০৭ সালে এখানে গড়ে তোলা হয় ‘প্যালাসিও দে স্যাল’ অর্থাৎ ‘লবণের প্রাসাদ’। হোটেলটির মেঝে, দেয়াল, ছাদ থেকে শুরু করে খাট, চেয়ার-টেবিলসহ যাবতীয় সব আসবাবপত্র লবণের ইট দিয়ে তৈরি। ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রায় ১০লাখ লবণের ইটের ব্যবহার রয়েছে এখানে। কেবল পর্যটকই নয়, বরং ৮০ হাজার প্রজাতির পাখিসহ  নানা রকম প্রাণীর  প্রজনন কেন্দ্র এটি।

গেন্ডা-ওয়ার্ম কেভ : ভারতের রাজস্থানের মতো একই পাথর দিয়ে তৈরি এই পাহাড়। গেন্ডা-ওয়ার্ম কেভটির অবস্থান নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের ওয়াইটোমো শহরের ঠিক বাইরে। গুহাটির ভেতর রয়েছে চুনা পাথরের আস্তরণ যা পর্যটকদের নজর কারে। এছাড়াও গুহার মধ্যে বয়ে গেছে একটি হ্রদ। লক্ষ লক্ষ জোনাকির আবাস স্থল এই গুহা। শুধু তাই নয়, এই গুহায় এমন এক রকম কেঁচো বাস করে যা অন্ধকারে আলো জ্বালাতে সক্ষম। রাতের অন্ধকারে গুহাটির মধ্যে চুনাপাথরের আস্তরণে সেটে থাকা লক্ষ লক্ষ জোনাকি আর কেঁচোগুলোর আলো নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করে। পর্যটকেরা এখানে হ্রদে নৌকায় চড়ে অন্ধকারে এই প্রাকৃতিক আলো উপভোগ করে।

অ্যারিজোনার গিরিখাত : যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ‘এন্টিলোপ ক্যানিয়ন’ বা গিরিখাতটি ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের শীর্ষে। মূলত পানিপ্রবাহের কারণে বেলে পাথর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মিলিয়ন বছর পূর্বে গভীর এই গিরিখাতটির সৃষ্টি হয়। বন্যা ও উপ-বায়বীয় প্রক্রিয়ার কারণে এর শিলাগুলো অদ্ভুত আকার ধারণ করেছে। এর শিলাগুলোতে সূর্যের আলো আছড়ে পড়ে চমৎকার আলোছায়ার মায়া তৈরি করে যার দরুন আলোকচিত্রের জন্য আলাদা কোনো আলোর ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। তবে অপরূপ সৌন্দর্যের এই গিরিখাতে ভ্রমণে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় প্রতিদিন শুধু মাত্র ২০ জন পর্যটকই পারে এখানে প্রবেশ করতে। গিরিখাতটির সবগুলো স্লট একই রকম হওয়ায় রয়েছে হারানোর ভয়। গ্রীষ্মকালে এর সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণে।

আমাজনের মরুভূমি : আমাজন পৃথিবীর বৃহত্তম একটি ঘন জঙ্গল। যার কিছু অংশ ছেয়ে আছে ব্রাজিলের উত্তর ও পূর্ব অংশে। সাধারণত আমাজন জঙ্গল বলতে ঘনগাছ, পশু-পাখির আবাসস্থল বোঝালেও ব্রাজিলে এর রূপ একদমই ভিন্ন। বছরের পর বছর সমুদ্রের ঢেউয়ে বয়ে আসা বালি এখানকার অরণ্যকে গ্রাস করেছে। বিভিন্ন নদী ও সমুদ্রের বালি জমা হয়ে তৈরি হয়েছে মরুভূমি। গ্রীষ্মে বালির নিচের স্তরে লুকিয়ে থাকে কলম্বিয়ান ব্যাঙ। বর্ষাকালে উত্তপ্ত এ মরুভূমি সেজে উঠে ভিন্ন রূপে। বৃষ্টির পানিতে তৈরি হয় ছোট ছোট উপহ্রদ। মরুভূমিটি সারা বছর প্রাণহীন থাকলেও বর্ষার এ সময় পর্যটকে মুখর হয়ে উঠে। হ্রদগুলোতে বাড়তে থাকে মাছ, সেই সাথে এই প্রজনন মৌসুমে প্রায় ১০০০ ব্যাঙাচির জন্ম হয়। মাছ, ব্যাঙের পাশাপাশি পিনিঙ্গা কচ্ছপেরও বিচরণ ভূমি এটি। বর্ষা শেষে ফের প্রাণহীন বালিয়াড়িতে পরিণত হয় এটি।

ডেজার্ট রোজ : পৃথিবীর মরু অঞ্চলগুলোতে খুব একটা উদ্ভিদ দেখা যায় না। গোলাপ গাছ তো একে বারেই না। তবুও মরুভূমির ‘মরু গোলাপ’গুলো সবার কৌতুহলের প্রান্তে। অদ্ভুত লাগছে? মরুভূমির অনুর্ভর বালিরাশি আর জিপসামের সমন্বয় তৈরি হয় পাথর। আর এই পাথরগুলো পাশাপাশি মিলে আকার নেয় পাপড়ির। পাপড়িগুলো পরস্পর মিলে রূপ নেয় গোটা ফুলের। সাইপ্রাস, তিউনিসিয়া, সৌদি আরব, কাতার, মিসর, সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন মরু অঞ্চলে এমন গোলাপ শিলা পাওয়া যায়। এই গোলাপ শিলাগুলো আহরণ করে এর খাঁজে জমে থাকা বালি পরিষ্কার করে রিং, কানের দুলসহ অন্যান্য অলংকার হিসেবে চড়ামূল্যে বিক্রি হয়।

লেখক: আসমাউল হুসনা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads