• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
হামিদুজ্জামান খানের ‘ফর্ম/ফলন’

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

হামিদুজ্জামান খানের ‘ফর্ম/ফলন’

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০২২

এ অঞ্চলে আধুনিক ভাস্কর্য চর্চার সূচনা করেছিলেন পঞ্চাশের দশকে নভেরা আহমেদ। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পর যে শিল্পীদের চর্চায় বাংলাদেশের ভাস্কর্যচর্চা প্রসার লাভ করে, তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। তাঁর প্রচুর ভাস্কর্য এখন পর্যন্ত দেশে-বিদেশে স্থায়ীভাবে উন্মুক্ত উদ্যান ও সড়কদ্বীপে স্থাপিত হয়েছে। অথচ তাঁর শুরুটা হয়েছিল ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের এক উজ্জ্বল শিক্ষার্থী হিসেবে, ভেবেছিলেনও হবেন পেইন্টার। একটা দুর্ঘটনা মোড় বদলে দিয়েছিল শিল্পী হামিদুজ্জামানের শিল্পীত অভীপ্সার। যদিও তিনি জলরঙের কাজেও খ্যাতি লাভ করেছেন, তদুপরি বাংলাদেশে ভাস্কর হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি। সিউল অলিম্পিক পার্ক কোরিয়ায় হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্য স্টেপস্ (সিঁড়ি) স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে দুর্লভ সম্মান।

এই শিল্পীর নতুন-পুরোনো বেশ কিছু ভাস্কর্য ও আঁকা ছবি নিয়ে রাজধানীর কলাকেন্দ্রে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী ‘ফর্ম/ফলন’। দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীটির বাছাইবিন্যাস করেছেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান।

গত মঙ্গলবার বিকেলে মোহাম্মদপুরে কলাকেন্দ্রে ছিল প্রদর্শনীর অনাড়ম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম ও শিল্পসমালোচক মুস্তফা জামান। পুরোনো পরিচয়ের সূত্র ধরে হামিদুজ্জামান খানের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শিল্পীর বয়স প্রায় আমার সমান। এই বয়সেও তিনি এত পরিশ্রম করতে পারেন, ভেবে অবাক হতে হয়। দিনের পর দিন তিনি স্কাল্পচার পার্কে কাজ করে সেটিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।’

মুস্তফা জামান বলেন, ‘এর আগে হামিদুজ্জামান খানের একধরনের কাজ দেখেছি আমরা। সেসব দেখলে একরকম ধাঁধার সৃষ্টি হয়। এই প্রদর্শনীটির রয়েছে একধরনের সামগ্রিকতা। এখানে অনেক রকম কাজের মধ্য দিয়ে অন্য রকম এক হামিদুজ্জামান খানকে পাওয়া যাবে।’

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বেশ কিছু ধাতব ভাস্কর্য রয়েছে, ইতিমধ্যে যেসবের অতিকায় সংস্করণ তৈরি করেছেন শিল্পী। বিভিন্ন স্থাপনা ও স্থানের সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে সেগুলো। আরও কিছু ভাস্কর্য রয়েছে। প্রদর্শনীতে রয়েছে মার্বেল ও স্টিলের ভাস্কর্য। আছে অ্যাক্রিলিক ও কালিতে আঁকা চিত্রকর্ম ও স্থাপনাশিল্প। এর মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়বে সাড়ে ৬ ফুট বাই ১৬ ফুটের একটি ক্যানভাস। যেটার ওপর অ্যাক্রিলিকে ছবি এঁকেছেন শিল্পী।

প্রদর্শনী সম্পর্কে অধ্যাপক হামিদুজ্জামান বলেন, প্রদর্শনীর নাম রাখা হয়েছে ‘ফর্ম/ফলন’। ফর্ম মানে আকৃতি। এটি একটি গড়ন। এটা নতুন ধরনের একটি আইডিয়া। যা তোমরা এর আগে কখনো দেখনি। এ ফর্মগুলো জ্যামিতিক না আবার পুরোপুরি অর্গানিকও না। আমি কাজ করতে করতে এরকম হয়েছে। বলতে পার এটা আমার সম্পূর্ণ নিজস্বভাবে তৈরি করা ফর্ম। এই ফর্ম নিয়ে কাজ করছি দীর্ঘদিন ধরে। হাজার হাজার ফর্ম নিয়ে চিন্তা করছি। সেগুলো বানাচ্ছি নিজের মনের মতো করে। এভাবে আমার নিজস্ব ফর্মের একটি গন্ডি তৈরি হয়েছে।  এগুলো আবার স্কাল্পচারে প্রয়োগ করছি।  এই প্রদর্শনীতে বড় সাইজের পেইন্টিং আছে। একটা বড় ছবি আছে ১৬ ফিট বাই সাড়ে ৬ ফিট। আরেকটি আছে ৮ ফিট বাই ৮ ফিট। ৩ ফিট বাই ৩ ফিট। এগুলো পেইন্টিং। ছোট ছোট কাজ আছে মেটালের। সব মিলিয়ে ৫০ টি। এগুলো স্টোনের আছে- মেটালের আছে, ব্রোঞ্জের আছে, ওয়েল্ডিং করা, শিট মেটালের আছে। এটা আমার ৪৪ তম একক প্রদর্শনী।

এই প্রদর্শনীতে আমি একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছি। কীভাবে আমি ছবির জগতে ঢুকলাম। কীভাবে ছবিগুলো নিয়ে চিন্তা করলাম। তারপর আস্তে আস্তে কাজ শুরু করলাম। নিজের মতো করে ছবিগুলো, ভাস্কর্যগুলো সাজালাম।  আমার চিন্তা, আইডিয়া নিজের মতো করে ডেভেলপ করা। বড় কাজগুলো একভাবে করি। ছোট কাজগুলো আরেকভাবে করি। ছোট কাজ যেমন করে ফেলা যায় সহজেই। বড় কাজগুলো করতে গেলে আমার বিশদ ভাবতে হয়। সেই কাজকে বিভিন্ন ফর্মে চিন্তা করি। কোনোভাবে করলে আমার কাজের সেরাটা আমি দিতে পারছি। এটা তো হুট করে হয় না। সময়, চিন্তা, বুদ্ধি ও কাজের সঠিক প্রতিফলনটা ঘটাতে হয় আমাকে। আগে কাগজে ড্রইং করি। পরে মেটালে যাই। তারপর আস্তে আস্তে বিশদ আকারে কাজ শুরু করি। পুরোটাই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা আমার চিন্তা ও কাজের ফসল। প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যই হলো নতুনরা যাতে আমার কাজগুলো বুঝতে পারে। তারা যাতে আমার মতো কিছুটা হলেও চিন্তা করতে পারে, যাতে তাদের কাজের ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হয়। তারা যেন আমার কাজ দেখে শিখতে পারে। আমার মেধাকে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। মেধা অন্যের মধ্যে বিকশিত করলে সেটি বাড়তেই থাকে। নতুনরা বুঝতে পারবে আমার কাজ। আমার ফর্ম। যেটি এক বছর, দশ বছর, বিশ বছর নয় দীর্ঘ ৫০ বছরের সাধনার ফল। যা আমি নতুনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি কীভাবে কাজ করি। ওরা সহজেই বুঝতে পারবে।

১৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী ঘুরে আসা যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads