• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ডেমু ট্রেন

ফাইল ফটো

প্রথম পৃষ্ঠা

অনেক দেশেই বাতিলের পথে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৮

ইংল্যান্ডে ডেমু ট্রেনকে বলা হয় পেসার। কিন্তু সেদেশের লোকজনের কাছে ‘বনকুক্কুট’ নামেই পরিচিত। কেউ-বা বিরক্ত হয়ে বলে ‘ঘাড় নাড়ানো গর্দভ’। ঘটর ঘটর শব্দ করে ছুটে চলার কারণেই এই নাম।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন চলছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কিন্তু দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট তিন কামরার এই রেলবাসগুলো প্রথম চালু করে ব্রিটেন। অল্পগতিতে কমদূরত্বে যাতায়াতের জন্য যুক্তরাজ্যে এই রেলবাসগুলো চালু হয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। ১৪১, ১৪২, ১৪৩ এবং ১৪৪ এরকম বিভিন্ন ক্লাসের কয়েকটি পেসার চালু করে তারা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে এসব ট্রেন চলে গেছে বাতিলের খাতায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ পেসার যুক্তরাজ্য থেকে একেবারে তুলে নেওয়া হবে। কয়েকটি উন্নত দেশও এগুলো ব্যবহার বাদ দেওয়ার তালিকায় রেখেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালকে ধরা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে পেসার বিলুপ্তির শুরুর বছর। ইতোমধ্যে তারা ব্যবহূত কিছু ডেমু ট্রেন ইরানের কাছে বিক্রি করেছে।

মোটাদাগে দুটো কারণে ডেমু ট্রেন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রথম কারণ হচ্ছে ডিজেল ব্যবহার থেকে সরে আসছে উন্নত দেশগুলো। পরিবেশ তো দূষিত করেই, তার সঙ্গে খরচও প্রচুর। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এখন মানুষ আরো দ্রুত ছুটতে চায়। তাই বৈদ্যুতিক ট্রেনের ওপরই নির্ভরশীল বেশি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ডেমু ট্রেনগুলো বিদ্যুৎ ইঞ্জিন দিয়ে চালানো যাচ্ছে না। ডিজেল-ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন দিয়েও চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কিছু দেশে। কিন্তু স্বল্পগতিতে ও স্বল্পদূরত্বে চলতে গিয়ে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। ফলে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি।

ডেমু ট্রেনগুলো ঘণ্টায় সাধারণত ৬৫ থেকে ৭৫ কিলোমিটার গতিতে চলে। উন্নত বিশ্বে শহরতলির একশ’ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই এগুলোর চলাচল। আর তা করতে গিয়ে শহরের মধ্যে অনেক জায়গা দখল করে নেয়। কাজ করে বাসের কিন্তু আয়োজনটা বিশাল। অনেক জায়গাজুড়ে রেললাইন বসাতে হয় এই ডেমু ট্রেনের জন্য। মাত্র দেড়শ’ থেকে দুইশ’ যাত্রী উঠতে পারে তিনটি বগিতে। আর চলাচল করতেও খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয় না। যুক্তরাজ্যে অনেক যাত্রীর অভিযোগ, ডেমু ট্রেনের ভিতর বসে থাকলে মনে হয় সারাক্ষণ কানের কাছে একটা হেয়ার ড্রেসার চলছে।

বিশ্বের যেসব দেশে ডেমু ট্রেন চলছে তা সবই নগরকেন্দ্রিক। এর জন্য আলাদা লাইনও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে আন্তঃজেলা লাইনের মধ্যেই ডেমুগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাস-ট্রাকের সঙ্গে ডেমু ট্রেনের সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এবছরের জানুয়ারি মাসেও কুমিল্লা বানাসুয়া ব্রিজের কাছে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে একটি ডেমু ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন বন্ধ থাকে কয়েক ঘণ্টা।

ডেমু ট্রেন হাইড্রোলিক, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক- এই তিন পদ্ধতিতেই চালানো গেলেও এখন বেশিরভাগ ডেমু ট্রেনই বিদ্যুৎচালিত। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এখনো কিছু ডেমু ট্রেন চললেও তা চলে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনীর মাধ্যমে। তার জন্য তাদের আধুনিক প্রযুুক্তির ব্যবস্থা আছে। দক্ষ প্রকৌশলী আছে। কিন্তু আমাদের দেশের ডেমু ট্রেনগুলো কেনা হয়েছে চীন থেকে, আর তা একবার নষ্ট হয়ে গেলে ঠিক করার জন্য প্রকৌশলী আনতে হয় বাইরে থেকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads