একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আজ শুক্রবার চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে। ওই সরকারে কারা থাকবেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে না পরে ওই সরকার গঠন হবে- এসব বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এবারের সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার চূড়ান্ত করা ও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয় নিয়েই আজকে দলটির যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব, সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল ও দলের সংসদীয় কমিটির যৌথ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও পার্লামেন্টারি পার্টির যৌথসভা আজ সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তার। ওই সরকারের আকার কেমন হবে, এ বিষয়ে তিনি বৈঠকে জানাতে পারেন। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনাও তিনি দেবেন। নির্বাচন সামনে রেখে আজকের সভাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানায়, আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি। ওই সরকারের সময়ে মন্ত্রিসভার আকার ছোট হয়ে আসার কথা আগে বলা হলেও এর সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোট ‘সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে’ বলে তথ্য আছে সরকারের আছে। মন্ত্রিসভার আকার ছোট হয়ে এলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে নতুন চিন্তা ও পরিকল্পনা করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট হয়ে এলে বাদ পড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সংসদীয় এলাকায় প্রভাব অনেকটা কমে যায়, যা ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে দলের অনেকে মনে করেন। এসব বিবেচনায় নির্বাচনকালীন সরকারের আকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত সরকারের মতো করার পরিকল্পনা নেই।

নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট নাও হতে পারে বলে গত ২২ অক্টোবর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখনকার মন্ত্রিসভায় সব দলের প্রতিনিধিই আছেন। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’ এর পর দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ‘মনে হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার আকার ঠিকই থাকছে। মন্ত্রিসভার আকার ছোট হলে নতুন করে দুই একজন যুক্ত হবেন। আর আকার বর্তমানের মতো থাকলেও দু-একজন যুক্ত হতে পারেন।’

সূত্র মতে, নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ কম সময়ের মধ্যে রেখে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। ওই সরকারের মেয়াদ ৪৮ দিনের মধ্যে রাখতে চাইছেন ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট নেওয়া পর্যন্ত ৪০ থেকে দিনের বেশি ও ৪৮ দিনের কম সময়ের ব্যবধান রাখতে চায়। ওই সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন প্রশাসনের ওপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ফলে সরকারবিরোধী দলগুলো তখন আন্দোলন করে দেশে ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা।

দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তিন দিন আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল। এবার তফসিলের আগে না পরে নির্বাচনকালীন সরকার, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। বিষয়টি তিনিই জানেন।’

নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর যেকোনো দিন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ। ২০ ডিসেম্বরকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনা করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচনকালীন সরকারও একই সময়ে গঠন করা হতে পারে। ৩১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে। তফসিল নির্বাচনের অংশ হওয়ায় এ সময়ের আগে তা ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই।