• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
মন্ত্রিসভার শপথ সোমবার

জাতীয় সংসগ

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

তালিকা শেখ হাসিনার ল্যাপটপে

মন্ত্রিসভার শপথ সোমবার

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান হবে আগামী সোমবার। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের পর বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, ৭ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩টায় শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এবার সরকার গঠন করে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন সরকারের আকার ৬০ সদস্যের হতে পারে। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হতে পারেন মোট ৩৫ জন, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ৪ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৮ জন এবং উপমন্ত্রী ৫ থেকে ৬ জন হতে পারেন। তবে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কারা কারা হচ্ছেন তা নিয়ে বিভিন্ন সূত্র বিভিন্ন জনের নাম প্রকাশ করলেও তা চূড়ান্ত নয়। শেষ পর্যন্ত কার কপালে মন্ত্রিত্বের সৌভাগ্য ঝুলবে তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। নতুন সরকারে যারা যারা মন্ত্রী হচ্ছেন তাদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ল্যাপটপে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র আভাস দিয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ অনুষ্ঠানের পরই আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নিজেই মন্ত্রিপরিষদ গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

নয়া মন্ত্রিসভা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নানারকম আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে কে বাদ পড়বেন, কে থাকবেন এ নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার তালিকায়ও আছে বেশকিছু সিনিয়র মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নাম। তবে প্রধানমন্ত্রী দলের শীর্ষ জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেবিনেটে আনার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একজন সদস্য বলেন, এখন আমরা যা ভাবছি তার অনেক কিছুই ঠিক নাও থাকতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে এর আগেও আমরা দেখেছি, তালিকা এক করম দেখেছি, পরে প্রকৃতপক্ষে হয়েছে আরেক রকম। কারণ এ বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তিনিই ভালো জানেন যে, কী হতে চলেছে।

নতুন মন্ত্রিসভার আলোচনায় যারা : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠন হতে যাওয়া মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা কম। তবে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী দায়িত্বে থাকছেন বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা নিশ্চিত করেছেন। যেসব মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ আসতে পারে, সেগুলো হলো অর্থ, জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, আইন, ধর্ম, ভূমি, বস্ত্র ও পাট উল্লেখযোগ্য।

আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদের যে শাসন চালিয়েছে, তাকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকারের পর সবচেয়ে সফল বলে দাবি করে আসছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা এসেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকেও। আর এই মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনো কর্মঠ, যাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক বা সমালোচনা নেই। তাই তাদের পাল্টানোর প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার।

গত রোববার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য হারেননি। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগও নেই। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়টিও সামনে আসেনি সেভাবে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে বয়স আর শারীরিক অসুস্থতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবারই আওয়ামী লীগ আনে নতুন মুখ। এসবই পরিবর্তনের কারণ হবে।

সচিবালয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিশেষ কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন। এটা একেবারেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে যাত্রা শুরু হয়েছিল বর্তমান সরকারের। এদের মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত ওই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৫৩ জন। এবারো নবগঠিত মন্ত্রিসভার আকার ৬০-এর আশপাশে থাকতে পারে।

নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় যারা : নতুন মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন, এই আলোচনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদটি নিয়ে। এত দিন আলোচনায় না থাকলেও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকেও রাখতে হচ্ছে বিবেচনায়। দুই মেয়াদ পর অর্থমন্ত্রীর পদে এবার নতুন মুখ আসছে, এটা অনুমিত ছিল ভোটের আগে থেকেই। কারণ আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদ থেকে বিদায় নিয়েছেন, অংশ নেননি নির্বাচনেও। তার আসনে জিতেছেন ছোটভাই একে আবদুল মোমেন। ধারণা করা হচ্ছিল, মুহিত আর থাকছেন না মন্ত্রিসভায়। তবে মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আরো এক বছর দায়িত্ব পালন করতে চান। সে ক্ষেত্রে তার মেয়াদ বাড়তেও পারে। তবে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, মুহিতই থাকছেন, এই বিষয়টি নিশ্চিত নয়। অন্য যে নামগুলো আলোচনায় আছে তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। এ ছাড়া যুব ও ক্রীড়ায় নতুন যুক্ত হতে পারেন বাংলাদেশ ওডিআই ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

গঠনের পথে থাকা মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাওয়াদের মধ্যে ঢাকার সালমান এফ রহমান, বেনজীর আহমেদ, একেএম রহমতুল্লাহ, আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, পঞ্চগড়ের নুরুল ইসলাম সুজন, খুলনার পঞ্চানন বিশ্বাস, রংপুরের টিপু মুনশি, জয়পুরহাটের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নওগাঁর সাধন চন্দ্র মজুমদার, কুষ্টিয়ার মাহবুব উল আলম হানিফ, শ্রীমঙ্গলের উপাধ্যক্ষ ড. আবদুস শহীদ, হবিগঞ্জের মাধবপুরের অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এবং বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিনের নাম আছে আলোচনায়। এ ছাড়া যশোরের কাজী নাবিল আহমেদ, গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, কিশোরগঞ্জের নূর মোহাম্মদ, মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, পিরোজপুর আসনের শ ম রেজাউল করিম, মুন্সীগঞ্জের মৃণাল কান্তি দাশ, নরসিংদীর নূরুল মজিদ হুমায়ূন, মাদারীপুরের আবদুস সোবহান গোলাপ, হবিগঞ্জের মাহবুব আলী, কুমিল্লার সেলিমা আহমাদ মেরী, চাঁদপুরের শফিকুর রহমান, চট্টগ্রামের মহিবুল হাসান নওফেল ও মোস্তাফিজুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কুজেন্দ্র লাল আছেন আলোচনায়। টাঙ্গাইল থেকে আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রামের আফসারুল আমীন, গোপালগঞ্জের ফারুক খান, চাঁদপুরের দীপু মনি আবার ফিরতে পারেন মন্ত্রিসভায়। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নামও আছে আলোচনায়। সেক্ষেত্রে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন নাও থাকতে পারেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads