• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
নতুন সরকারের যাত্রা

নতুন মন্ত্রিসভার শপথ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সরকার

মন্ত্রিসভার শপথ, উন্নত রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়

নতুন সরকারের যাত্রা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৮ জানুয়ারি ২০১৯

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চতুর্থবারের মতো সরকারের যাত্রা শুরু হলো গতকাল সোমবার চমকপ্রদ নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা, মানবিক দেশ ও উন্নত রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে আরেকটি সরকারের পথচলা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র সঙ্গে সমন্বয় রেখেই গঠিত হয়েছে মন্ত্রিসভা। দলটির ঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা নিয়ে নতুন সরকার যাত্রা শুরু করেছে। ঐতিহাসিক এ নবযাত্রায় নতুনদের প্রতি আস্থা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। টানা তৃতীয় ও মোট চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করার প্রত্যয় নিয়ে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের দরবার হলে উপস্থিত অতিথিদের বিপুল করতালির মধ্যে শপথ নেন তিনি। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবেও তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

শপথ শেষে শপথপত্রে স্বাক্ষর করেন চারবারের নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন রেকর্ডজয়ী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত তার বোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী ও কয়েকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শপথের মধ্য দিয়ে বিশ্বে নারী সরকার প্রধানদের মধ্যে সবচয়ে বেশি দিন রাষ্ট্র পরিচালনার মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনাকে নিয়োগের বিষয়টি অবহিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বঙ্গভবনের দরবার হলে সবাইকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি। রীতি অনুযায়ী প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ নেন। শপথের মধ্য দিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।  পাশাপাশি নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নেয়ার মাধ্যমে বাতিল হয়ে গেলো আগের মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভার ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রীর রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের শপথ নেয়ার চার দিনপর গতকাল শপথ নিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সবার শপথ গ্রহণ শেষে জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।

বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ নিতে বঙ্গভবনের দরবার হলে উপস্থিত হন। এরপর ৩টা ৩৫ মিনিটে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ সময় বিউগলে সুর বেজে ওঠে। এর আগেই নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রায় সবাই বঙ্গভবনে চলে আসেন। গত রোববার বিকালে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসছেন, তাও জানানো হয়। সাধারণত শপথ নেয়ার আগে নিশ্চিত করে জানা যায় না যে, কাদেরকে শপথ নেয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। এবার আগেভাগে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও তাদের মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশ করার বিষয়টিকে স্বচ্ছতার জন্য দেশের রাজনীতিতে নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এবারের মন্ত্রিসভায় আছে দারুণ চমক। মন্ত্রিসভার ৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩১ জনই নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৭ জনই প্রথমবার মন্ত্রী হয়েছেন। আর প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন পাঁচজন। উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া তিনজনই নতুন।

গতকালের শপথ অনুষ্ঠানস্থল বঙ্গভবনের দরবার হল ছিল অতিথিতে পূর্ণ। অনুষ্ঠানে আসা আগের মেয়াদের বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রথম সারিতে বসেন। দরবার হলে তাদের জন্য ছিল আলাদা আসন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তত এক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি। উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও। শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কমর্ররত সাংবাদিকরাও। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

গত ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা হিসেবে পুর্ননির্বাচিত করা হয়। এর আগে ওই দিন সকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। পরে ওইদিনই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। ওই সময় তাকে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে তাতে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, এবারের মন্ত্রিসভার আকার ৪৭ জনের। তবে পুরনোদের অনেকেই বাদ পড়েন। ঠাঁই পান নতুন সংসদ সদস্যরা। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৪৭ জনের ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিন জন উপমন্ত্রী গতকাল শপথ নেন। নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ২৪ জন হলেন- আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক), ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), আব্দুর রাজ্জাক (কৃষি), আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), হাছান মাহমুদ (তথ্য), আনিসুল হক (আইন), আ হ ম মুস্তফা কামাল (অর্থ), তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায়), দীপু মনি (শিক্ষা), এ কে আবদুল মোমেন (পররাষ্ট্র), এম এ মান্নান (পরিকল্পনা), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), গোলাম দস্তগীর গাজী (বস্ত্র ও পাট), জাহিদ মালেক (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), টিপু মুনশি (বাণিজ্য), নুরুজ্জামান আহমেদ (সমাজকল্যাণ), শ ম রেজাউল করিম (গৃহায়ন ও গণপূর্ত), শাহাব উদ্দিন (পরিবেশ ও বন), বীর বাহাদুর উ শৈ সিং (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক), সাইফুজ্জামান চৌধুরী (ভূমি), নুরুল ইসলাম সুজন (রেলপথ), ইয়াফেস ওসমান- (টেকনোক্র্যাট; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), মোস্তাফা জব্বার (টেকনোক্র্যাট; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি)।

১৯ জন প্রতিমন্ত্রী হলেন, কামাল আহমেদ মজুমদার (শিল্প), ইমরান আহমেদ (প্রবাসীকল্যাণ), জাহিদ আহসান রাসেল (যুব ও ক্রীড়া), নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি), আশরাফ আলী খান খসরু (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), মন্নুজান সুফিয়ান (শ্রম), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌপরিবহন), জাকির হোসেন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), শাহরিয়ার আলম (পররাষ্ট্র), জুনাইদ আহমেদ পলক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন), স্বপন ভট্টাচার্য (স্থানীয় সরকার), জাহিদ ফারুক (পানিসম্পদ), মুরাদ হাসান (স্বাস্থ্য), শরীফ আহমেদ (সমাজকল্যাণ), কেএম খালিদ (সংস্কৃতি), এনামুর রহমান (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ), মাহবুব আলী (বিমান), শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (টেকনোক্র্যাট : ধর্ম)। তিন উপমন্ত্রী হলেন হাবিবুন নাহার (পরিবেশ), এ কে এম এনামুল হক শামীম (পানিসম্পদ) ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (শিক্ষা)।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads