প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে গণভবনে চা-চক্র যেন রাজনীতিবিদদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার এই চা-চক্রে যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের দক্ষিণ লনের সবুজ চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বিকাল ৪টার কিছু পর অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। এ সময় ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে সহাস্যে কুশলাদি বিনিময় ও শুভেচ্ছা জানান তিনি। চা-চক্র চলে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত। পরে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতিথিদের বসার জন্য গণভবনের সবুজ লনে চেয়ার, টেবিল, মোড়া, মাদুরের ব্যবস্থা করা হয়। খাবার পরিবেশনের জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয় এবং এ সময় দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজানো হয়। বিভিন্ন খাবারে আপ্যায়িত করা হয় অতিথিদের। ফুচকা, চটপটির জন্য আলাদা আলাদা টেবিল রাখা হয়। অতিথি আপ্যায়নেও বিশেষত্ব হিসেবে ছিল ভাপা, চিতই, পাটিসাপ্টা এবং পুলিসহ হরেকরকম দেশি পিঠা। মুড়ি, মোয়া, নাড়ু ও জিলাপি ছাড়াও মোগলাই খাবার হিসেবে ছিল বিভিন্ন ধরনের কাবাব, নানরুটি, পরোটা। এ ছাড়া নানা ধরনের শরবত, কফিও ছিল।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয় পায় আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে চা-চক্রের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে এই আয়োজন। তবে বিএনপি ও ডক্টর কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আমন্ত্রণ পেলেও চা-চক্রে অংশ নেয়নি। এ ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোটও এ অনুষ্ঠানে যায়নি। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্যাডে লেখা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রের আমন্ত্রণ অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে আলোচিত হয়। কমিটি এই চা-চক্রে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে এসেছেন, খোলামেলা আলোচনা করেছেন- এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি তার এই উদ্যোগ আপনাদের ভালো লেগেছে। দেশ গঠনে তার পক্ষ থেকে সবার সহযোগিতা কামনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় তার দেওয়া অঙ্গীকারগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আপনাদের উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা শুধু কুশলই বিনিময় করিনি, আমরা শীতের পিঠা খেতে খেতে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে আমাদের অভিমত শেয়ার করেছি।
গণভবনের চা-চক্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন খসরু।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাপা নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সুনীল শুভ রায়, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদ (আম্বিয়া) নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল, নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।
এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) এমএ মান্নান, মাহী বি. চৌধুরী এবং শমসের মুবীন চৌধুরী, বিএনএফ প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ১৪ দলের নেতা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
