• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নিরাপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়

ছবি: বাসস

সরকার

র‍্যাবকে প্রধানমন্ত্রী

নিরাপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়

  • বাসস
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, অন্যায়ে লিপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু কোনো নিরাপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বিষয় সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যারা অন্যায় করবে সে যেই হোক, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে, সাথে সাথে এটাও দেখতে হবে যে, অযথা কোন মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে র‌্যাবের ১৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দরবারে র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে তিন বাহিনী প্রধানগণ, সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ন্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশের আইজিপি সহ পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ,মহাপরিচালক বিজিবি, মহাপরিচালক আনসার ও ভিডিপি এবং কোষ্ট গার্ডের মহাপরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও লিংকেজের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন র‌্যাব ফোর্সেস ইউনিটের সদস্যরাও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে র‌্যাব ফোর্সেস এর অভিযানিক সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী কুর্মিটোলায় র‌্যাব ফোর্সেস এর সদর দফতরে পৌঁছলে তাকে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আজকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের একটা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তবে, এই উন্নয়নের ধারাটা তখনই অব্যাহত থাকবে যথন আমরা দেশে বর্তমানের ন্যায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারি।’

তিনি অপরাধ প্রবণতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি অবরাধ প্রবণতায় যুক্ত হওয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে র‌্যাবের সদস্যদের নজর দেওয়ার আহবান জানান।

তিনি বলেন,‘অপরাধ যারা করবে অর্থাৎ অপরাধীকে গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা সেটাও যেমন আমাদের কাজ তেমনি অপরাধের সাথে কেউ যেন যুক্ত না হয় সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের নিতে হবে। আর সেটা করতে হলে একটা সমাজিক সচেতনটা সৃষ্টি করা দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন,‘আমি সকলকে এই কথাটা সকলের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা সকলে সেই বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি দেবেন যেন কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে কেউ যেন যুক্ত না হয়।’

র‌্যাবের কার্যক্রমকে আরো গতিশীলকরণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যেহেতু সকলেই এই দেশের সন্তান তাই দেশের উন্নতি হলে, আর্থসামাজিক উন্নয়ন হলে এর সুফলটা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যরাই পাবে, দেশের মানুষই পাবে। সেই সাথে গ্রামে গঞ্জে যারা বসবাস করেন তাঁদের ভাগ্যের উন্নতি হবে। বাংলাদেশেই সার্বিকভাবে দারিদ্র মুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারবে।

তিনি বলেন, দেশটার উন্নয়ন হলে কেউ গৃহহীন থাকবে না,সকলেই আবাসন সুবিধা, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা সহ মৌলিক সুবিধাগুলোগুলো নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ লাভ করবে এবং সমগ্র জাতিই উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে উঠবে, যে সপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

কয়েক দফায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট সমাধান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধিতে তার সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতটা স্বাবলম্বী হতে পারবো ততটাই আমরা সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো এবং আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সুন্দরভাবে যেন তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটাই আমরা চাই। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেন স্ব -স্ব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে তাঁদের সেই কাজের সুবিধাটা আমরা করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, আন্তরিকতা,সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক দ্রব্য উদ্ধার, জাল মুদ্রা, জাল পাসপোর্ট প্রস্তুতকারি, অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান এবং ভেজাল বিরোধীসহ নানা অভিযানে র‌্যাব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন,কাজেই র‌্যাবের সদস্যগণ দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে অবদান রেখেছে আমি এটুকু বিশ্বাস করি যে, দেশের মানুষেরও একটা আস্থা ও বিশ্বাস র‌্যাবের সদস্যদের প্রতি জন্মেছে এবং তারা র‌্যাবকে যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখে।

সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুদের দমন করে তাদের সাধারণ জীবনে পুণর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি র‌্যাবের সদস্যদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘তারা এই পুরো এলাকাটা দস্যুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।’

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার জন্য তাঁর সরকার ২০১২ সালে একটি টাস্কফোর্স করে দেয় এবং যৌথবাহিনী প্রায়ই সেখানে অভিযান পরিচালনা করতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কেউ যদি দস্যুতা ছেড়ে দিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবেন মর্মে অতীতে প্রদত্ত ঘোষণার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের ৩২টি বাহিনীর প্রায় ৩২৮ জন জলদস্যু এ পর্যন্ত আত্মসমর্পন করেছে । তাঁদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরি এবং তারা যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দরভবে জীবন যাপন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি ।’

তিনি বলেন, দস্যুতা ত্যাগকারিদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়শোনা করছে এবং একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে এসেছে। দস্যুর সন্তান হিসেবে কেউ আর অপমাণিত হচ্ছে না। একটা সম্মান জনক জীবন-যাপন করতে পারছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, যারাই নানারকম সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত তারা যদি আত্মমসমর্পন করে তাহলে তাদেরকে পুনর্বাসনে তার সরকার একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads