• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা ও জনপ্রিয়তা দুটোই বেড়েছে

সংগৃহীত ছবি

সরকার

প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা ও জনপ্রিয়তা দুটোই বেড়েছে

৮০ শতাংশ মানুষ মনে করে আগের থেকে ভালো করছে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি ২০২০

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে। সরকারের ওপর আগের মেয়াদের থেকে নতুন মেয়াদে সন্তুষ্টি বেড়েছে। একই সঙ্গে তার সরকারেরও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ৭২ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট।

অপরদিকে, রাজনীতিতে গুরুত্ব হারাচ্ছে বিএনপি। দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ৬৫ শতাংশ মানুষ।  

এসব তথ্য ওঠে এসেছে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রথম এক বছরের কার্যক্রম সম্পর্কে পরিচালিত জনমত জরিপটি পরিচালনা করেছে রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ফল তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের বিস্তারিত তুলে ধরেন গবেষণা টিমের সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত। এ সময় টিমের অন্য দুই সদস্য কাজী আহমেদ পারভেজ ও মো. মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরিপটি পরিচালিত হয় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে। এজন্য দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ২০ হাজার জন মোবাইল ব্যবহারকারী চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩৯ জনকে মোবাইলে ফোন করা হয়। যার মধ্যে ৫ হাজার ৪২৯ জন ফোন রিসিভ করে, যা নির্বাচিত ব্যক্তির ৬৮ শতাংশ। আর জরিপে অংশ নেন ২ হাজার ২৬৬ জন বা ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। গত ১১ থেকে ২০ জানুয়ারি সময়কালে এই জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে ত্রুটির হার ২ শতাংশের কম-বেশি বলে আয়োজকরা জানান।

মোবাইল ফোনে জরিপ পরিচালনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে জরিপ পরিচালনাকারীরা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এভাবে জরিপ পরিচালিত হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ও স্বীকৃত পদ্ধতি। দেশে বর্তমানে ৮৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। এ ধরনের জরিপে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মানুষ অংশ নিলেই গ্রহণযোগ্য জরিপ বলা যায়। কিন্তু এ জরিপে অংশ নিয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে আবুল হাসনাত মিল্টন বলেন, জরিপে মতামত প্রদানকারীদের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা বর্তমান সরকারের প্রথম এক বছরকে আগের তুলনায় ভালো বলে উল্লেখ করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, যা সরকার গঠনের সময় ছিল ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে সরকারের ওপর সন্তোষ বেড়েছে ১৫ শতাংশ উত্তরদাতার।

জরিপের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারের নতুন মেয়াদের বছরপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতেও সাধারণ মানুষ আস্থা রেখেছেন। ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আস্থার কথা জানিয়েছেন। মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা এই ভাষণে আস্থা রাখতে পারছেন না। আর ১১ শতাংশ মানুষ কোনো মত প্রকাশ করেননি।

সরকার প্রসঙ্গে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় পূর্ববর্তী মেয়াদ ও বর্তমান মেয়াদের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছেন কিনা। ৮০ শতাংশ উত্তরদাদা বলেন, আগের মেয়াদের থেকে সরকার ভালো করছে। ১৩ শতাংশ জানিয়েছে একই রকমভাবে পরিচালিত হচ্ছে সরকার। ৪ শতাংশ বলেছেন আগের থেকে সরকারের অবনতি হয়েছে। আর ৩ শতাংশ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রধানমন্ত্রীর ওপর ৮৫ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। যার মধ্যে ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা খুবই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা মোটামুটি সন্তুষ্ট। আর মাত্র ৩ শতাংশ সন্তুষ্ট নয়। এখানে ১২ শতাংশ উত্তরদাতা মন্তব্য করেনি। সরকারের বছরপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সেই ভাষণে শতভাগ আস্থার কথা বলেছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৬০ শতাংশ। ১১ শতাংশ অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি।

মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৩০ শতাংশ মনে করেন, সবচেয়ে কার্যকরী মন্ত্রণালয় হচ্ছে শিক্ষা। এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। অপরদিকে, সবচেয়ে কার্যকরী মন্ত্রী হচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে ওবায়দুল কাদেরের জনপ্রিয়তা বছর শেষে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ, ৬ মাস আগে যা ছিল ৪১ শতাংশ। 

সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা, জরিপে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের প্রশংসা করেছেন উত্তরদাতারা। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু, দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষায় উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম।

অন্যদিকে ব্যর্থতা হিসেবে বলেছেন দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব, পেঁয়াজ সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রোহিঙ্গা সংকট, সুশাসনের ঘাটতি, সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট, পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা আর ভিন্নমতের সহাবস্থান উল্লেখ করেছেন উত্তরদাতারা।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি-জরিপে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ৭২ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। মাঝামাঝি সন্তুষ্ট ৭ শতাংশ উত্তরদাতার। অসন্তুষ্ট ৬ শতাংশ। আর এই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

বিরোধী রাজনীতি জরিপে বলা হয়, ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকার কথা তীব্রভাবে বলেছেন। ৩১ শতাংশ এটি অনুভব করছেন মাঝারি ভাবে। আর বাকি ৫ শতাংশ হালকা ভাবে। তবে বিএনপির কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা। আর অসন্তুষ্ট ২৫ শতাংশ, মাঝামাঝি ৪ শতাশ আর মন্তব্য নেই ৬ শতাংশের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads