• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯

সরকার

ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’র সুফল নিয়ে সংশয়

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

শরিয়াহভিত্তিক ৮ হাজার কোটি টাকার ইসলামী বন্ড ছাড়তে যাচ্ছে সরকার। প্রথমবারের মতো ‘সুকুক’ নামের এই বন্ড সরকার চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ছাড়তে চায়। গত ২২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। তবে ‘সুকুক’ বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ যথাযথ খাতে বিনিয়োগ না হলে এর সুফলপ্রাপ্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে অর্থনীতিবিদদের।

তাদের মতে, নানা কারণে দেশে বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করার চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে দেশে সে অর্থে বন্ড মার্কেট এখন আর নেই। সরকার আর্থিক সংকট কাটাতে কিংবা অর্থ সংগ্রহের জন্যই ইসলামী বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমনটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও করছে করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট মেটাতে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য গ্রাহক বন্ড সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু বন্ড থেকে পাওয়া অর্থ যদি যথাযথ উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ না করে অন্য খাতে বিনিয়োগ করা হয় তাহলে এর সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার কারসাজির মতো বন্ডও যদি প্রভাবশালী কালো টাকার মালিকদের কারসাজির মুখে পড়ে, তাহলে গ্রাহকের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। ইসলামী বন্ড কিংবা প্রচলিত ট্রেজারি বন্ড যেটিই হোক না কেন, সেখানে গ্রাহকের অর্থ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করাটাই আসল কথা।’   

এর আগে গত অক্টোবরে ‘সুকুক’ বন্ড ছাড়তে একটি নীতিমালা করেছে সরকার। এই নীতিমালার আওতায় মঙ্গলবার বন্ড ইস্যুর চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সুকুক ইস্যু করবে।

মঙ্গলবারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর সম্পদের বিপরীতে সুকুক ছাড়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বন্ড বিক্রি করবে। বিপরীতে তারা মুনাফা পাবে।

সুকুক প্রচলিত সাধারণ বা ট্রেজারি বন্ড নয়। প্রচলিত বন্ড ও সুকুক বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান। আরবি শব্দ সুকুক-এর অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে।

তবে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের মতে, সাধারণ বন্ড এবং ইসলামী বন্ডের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটি একটি ভাঁওতাবাজি। ‘ইসলামী সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করলে মানুষ এই বন্ডের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে সে জন্যই ইসলামী বন্ডের কথা বলা হচ্ছে’ বলেন আবুল বারাকাত।

জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদাররাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজে হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক প্রচলিত আছে। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সুকুক বন্ড ছাড়া হয় মালয়েশিয়ায়। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার ও সৌদি আরবের মতো মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের মতো অমুসলিম প্রধান দেশগুলোতেও সুকুক প্রচলিত রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads