• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

সড়কে আগে যাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে বাসচালকদের মধ্যে

ফাইল ছবি

শেষ পৃষ্ঠা

বেশি ট্রিপ ও আয় বাড়াতে বেপরোয়া চালকরা

২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৩৯৭ জন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে আগে যাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে বাসচালকদের মধ্যে। বেশি যাত্রী উঠিয়ে দিনের আয় বাড়াতে চালকদের অসুস্থ এ প্রতিযোগিতা। এতে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।

মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার তিন দিনের ব্যবধানে মারাত্মক আহত হয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন ও গৃহবধূ আয়েশা। দুজনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজীব কলেজের ক্লাসে যাওয়ার পথে বাংলামোটরে স্বজন ও আয়েশা ছয় বছর বয়সী মেয়ে আহনাবিকে নিয়ে রিকশায় লালবাগের বাসায় ফেরার পথে ঢাকা কলেজের সামনে বিকাশ পরিবহনের চাপায় মারাত্মক আহত হন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭ সালে রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন। পঙ্গু হয়েছে ১ হাজার ৭২২ জন। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ১৯৩। মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৭৯।

সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালের তুলনায় সড়কে মৃত্যু বেড়েছে ১ হাজার ৩৪২। বছরে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৫। আহত হন ১৫ হাজার ৯১৪ ব্যক্তি। দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৩১২টি।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট, মহাখালী, মগবাজার, শাহবাগ ও পল্টন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে চলাচলকারী বাসের বেশিরভাগ চালাচ্ছেন হেলপাররা। জানতে চাইলে তুরাগ পরিবহনের এক চালক বলেন, ওস্তাদ (চালক) ছুুটিতে আছে তাই তাকেই ট্রিপ নিয়ে যেতে হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে মিরপুর লিংক বাসেও। বিভিন্ন সড়কে চলমান বেশিরভাগ লেগুনার চালক তরুণ। এসব লেগুনার হেলপার শিশু। এ দৃশ্য দেখছে পুলিশ, ব্যবস্থা নিচ্ছে না অজানা কারণে। ফলে অনিয়মের এ প্রবণতা বাড়ছে।

বালুঘাট-ফার্মগেট রুটের বাসের চালক মো. সুমন মিয়া। বাংলাদেশ খবরকে সুমন মিয়া জানান, এই রুটে গাড়ি কম যাত্রী বেশি। তাই কে কার আগে যাবে প্রতিনিয়ত চালকদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা চলে। আর যে কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

হেলপার দিয়ে বাস চালানোর প্রসঙ্গে এই চালক জানান, এটা সব সময় করা হয় না, মাঝেমধ্যে। বলেন, বেশিরভাগ বাস কোম্পানির নির্দেশ রয়েছে হেলপার দিয়ে বাস না চালানোর। কিন্তু অনেকেই এ নির্দেশনা মানছেন না। বাসমালিকরা তো রাস্তায় থাকেন না, তাই এ সুযোগ কাজে লাগান চালকরা উল্লেখ করেন তিনি।

একাধিক পরিবহন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ খবরের এই প্রতিবেদকের। তারা হেলপার দিয়ে বাস চালানোর কথা এড়িয়ে যান। বলেন, গাড়ি সাধারণত চালককে বুঝিয়ে দেন তারা। দায়িত্ব এখানেই শেষ। রাতে ট্রিপ শেষ হলে টাকার হিসাব নেন। রাস্তায় কোনো ঝামেলা হলে পুলিশের সঙ্গে দেন-দরবার করেন লাইনম্যানরা। প্রতিটি স্টপেজেই একজন করে লাইনম্যান থাকে। এদেরও টাকার একটা অংশ দেন চালকরা। তবে চালকদের সঙ্গে বাসমালিকের সঙ্গে চুক্তি হলো দিন শেষে ট্রিপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার। আর ট্রিপ বাড়াতে বাড়তি আয়ের আশায় অনেক সময় চালকরা নির্দিষ্ট স্টপেজের আগেই বাস ঘুরিয়ে ফেলেন বলে স্বীকার করেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহনের এসব অনিয়ম তদারকির অভাব প্রকট। রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। মাসোহারা দেওয়ায় চালকরা বেপরোয়া। আইনকানুনের তোয়াক্কা করে না। প্রশ্ন আছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ভূমিকা নিয়েও। টাকা দিলে আনফিট গাড়িও ফিট। না দিলেই আইনের কথা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads