• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নোংরা পরিবেশে তৈরি হয় বেকারিপণ্য

নোংরা পরিবেশে বেকারি পণ্য তৈরি

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

নোংরা পরিবেশে তৈরি হয় বেকারিপণ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০১৯

নগরজীবনের ব্যস্ততায় অনেক পরিবারই সকালের নাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে বেকারিপণ্য। বেকারির তৈরি ব্রেড, কেক, বনরুটি, পুডিংসহ বিভিন্ন রকমের খাবার খান অনেকে। রুটির সঙ্গে একটু জেলি মিশিয়ে নাস্তা সেরে নেন অনেকে।

প্রতিদিনের সকালে বিভিন্ন কোম্পানির বেকারিপণ্য এসে হাজির হয় রাজধানীর পাড়া-মহল্লার দোকানে দোকানে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বেশিরভাগ নগরবাসীর দিনের শুরুটা এভাবেই হয়। হাল্কা নাস্তা হিসেবে বেকারিপণ্যের ওপরই বেশি নির্ভর করে থাকেন অনেকে। কিন্তু এসব বেকারিপণ্য কতটা স্বাস্থ্যসম্মত বা নিরাপদ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ বেকারির পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। পিওর ফুড উৎপাদনে যে মান বজায় রেখে বেকারিপণ্য তৈরির বিধান রয়েছে তার ধারেকাছেও নেই বেকারি কারখানাগুলো। পণ্যের মান সংরক্ষণে নেই উপযুক্ত ব্যবস্থা। অনেক বেকারিপণ্যে উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় বা তারিখ লেখা নেই বেকারিপণ্যের গায়ে।

বিএসটিআই কর্মকর্তারা বলছেন, বার বার অভিযান চালানো হলেও এসব বেকারির উন্নতি হচ্ছে না। চাহিদার কথা মাথায় রেখে এরা স্থান পরিবর্তন করে আবার তাদের অনৈতিক ব্যবসা শুরু করে। অভিযানের কারণে এখন রাজধানীর বেশিরভাগ বেকারিপণ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিলেও তারা উৎপাদনের শর্ত মানছে না। অভিযান চলছে, জরিমানা, মামলা হচ্ছে। গত এক বছরে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বহুবার অভিযান চালানো হয়েছে, জরিমানা ও মামলাও করা হচ্ছে।

বিএসটিআই কর্মকর্তা রিয়াজুল হক বলেন, গত এক বছরে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বহু অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের কারণে অনেকে এখন বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু মান বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করছে না। তিনি বলেন, অভিযানে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগে বহু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। তবু পরিস্থিতির উন্নতি করা যাচ্ছে না।

বিএসটিআইয়ের অন্য কর্মকর্তারা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো বেকারিপণ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যে পরিবেশে এবং যে পদ্ধতিতে এই বেকারিপণ্য তৈরি হয় তা একজন ভোক্তা নিজ চোখে দেখলে কখনো খেতে চাইবেন না। অভিযানে দেখা গেছে, কালি-ঝুলি মাখা প্রতিটি কারখানার ভেতরে-বাইরে নোংরা কাদার, তরল ময়লা-আবর্জনা পরিবেশ। দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। আশপাশেই নর্দমা ময়লার স্তূপ। মশা-মাছির ভন ভন আর একাধিক কাঁচা-পাকা টয়লেটের অবস্থান। কারখানাগুলো স্থাপিত হয়েছে টিনশেড বিল্ডিংয়ে। বহু পুরনো চালার টিনগুলো স্থানে স্থানে ছিদ্র থাকায় বৃষ্টির পানিও অনায়াসেই কারখানার ঘরে ঢোকে। এতে পিচ্ছিল কর্দমাক্ত হয়ে থাকে মেঝে, কাদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খাবারে, কারখানাগুলোয় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই, দম বন্ধ হওয়ার মতো গরম।

রাত-দিন গরমে ঘামে চুপসানো অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা দলিত-মথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্য।

অভিযোগ আছে- উৎপাদন ব্যয় কমাতে এসব বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের নানা রকমের অখাদ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে টেক্সটাইলের রঙসহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার হয়। বেকারিতে পচা ডিম ব্যবহার যেন সাধারণ বিষয়।

বিএসটিআই কর্মকর্তারা বলছেন, মান অনুযায়ী বেকারি পণ্য তৈরিতে ভালোভাবে পোশাক পরে নিতে হবে। এ ছাড়া হাতে গ্লাভস ও মাথায় টুপি রাখতে হবে। যে পরিবেশে এসব কারখানায় বেকারিপণ্য তৈরি হয় তা বিএসটিআইয়ের পিওর ফুড অধ্যাদেশ ২০০৫ (সংশোধিত) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ অভিযানে দেখা গেছে শ্রমিকরা খালি গায়ে, দুই পা দিয়ে আটা-ময়দা মাখান। এ সময় তাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে মাখানো ময়দাতে মিশে যায়। পণ্য তৈরির সঙ্গে জড়িত এসব শ্রমিক খালি গায়ে কোনো রকমে গ্লাভস ব্যবহার না করেই ময়দার খামি থেকে বিস্কুট তৈরি করছে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বাহারি নামের চোখধাঁধানো মোড়ক থাকলেও নেই কোনো সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স। কোনো কোনো পণ্যের মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলেও কত তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে তা উল্লেখ থাকে না।

অভিযান পরিচালনাকালে তেলাপোকা, ইঁদুর ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় পাওয়া গেছে এসব কারখানায়। এসব বেকারির তৈরি নিম্নমানের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য কিনে একদিকে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক, অপরদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

এছাড়া বেকারির বিস্কুট পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে মেশানো হচ্ছে নিষিদ্ধ সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইট। বাণিজ্যিক নাম হাইড্রোজ। নোংরা পরিবেশের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বেকারি পণ্য উৎপাদনে কোনো প্রকার লাইসেন্স গ্রহণ করেনি বিএসটিআই থেকে। সিদ্ধেশ্বরী রোডের বেশ কিছু বেকারিতে অভিযানে দেখা গেছে অনুমোদন ছাড়াই পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক সংরক্ষণ করা হয়েছিল বিক্রির উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads