গতকাল রোববার থেকে রাজধানীর তিন রুট কুড়িল বিশ্বরোড-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী নারী-পুরুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তে নির্দিষ্ট রুটে হঠাৎ রিকশা না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রিকশা বন্ধ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কর্মজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
ওই তিন রুটে রিকশা কম থাকায় সিএনজি ও অন্য যানবাহনে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন বা পুলিশ কাউকেই সড়কে রিকশা বন্ধে তদারকি করতে দেখা যায়নি।
দিলারা জামান নামে এক কর্মজীবী মহিলা অভিযোগ করে বলেন, ‘যাত্রীবাহী বাস নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ায় না। বাসে উঠতে হয় দৌড়ের ওপর। নামতেও হয় একইভাবে। এভাবে বাসে ওঠা যায় না। আবার বাসে উঠেও ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রীর মাঝে পড়ে বিব্রতকর ও নিগ্রহের শিকার হতে হয়। এজন্য আমার মতো অনেকেই রিকশাকে বেছে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গর্ভবতী মা বলেন, এমন শারীরিক অবস্থায় ধাক্কাধাক্কি করে বাসে ওঠা অসম্ভব। তার ওপর বাসগুলো নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ায়ও না। রানিং অবস্থায় যাত্রী ওঠায় এবং নামায়। তা হলে কী করে বাসে চড়ব। আমার মতো নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির চাকরিজীবী মহিলা এবং নানা কারণে অসুস্থরা যাতায়াত করার বিকল্প ব্যবস্থা তো এই শহরে গড়ে ওঠেনি। তবে কেন সাধারণ যাত্রীর সহজ বাহন রিকশা নিষিদ্ধ করা হলো।
বাড্ডায় অয়ন ইসলাম নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর মা বলেন, প্রতিদিন বাবুকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। বাসে কোনো নিয়মকানুন মানা হয় না। তাই রিকশাই ভরসা। এখন সড়কে রিকশা নিষিদ্ধ করায় আমার মতো অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ, নারী, বৃদ্ধ, স্কুলযাত্রী ও অসুস্থদের কথা বিবেচনা না করে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনৈতিক, বেআইনি, জনস্বার্থবিরোধী। ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা, দায়িত্বহীনতা যানজটের মূল কারণ। রিকশা নয়। এয়ারপোর্টসহ যেসব রাস্তায় রিকশা চলে না কিন্তু যানজট লেগে থাকে কর্তৃপক্ষ সেসব রাস্তায় কার, বাস নিষিদ্ধ করবেন কি? মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে নেই। এর ফল কখনো ভালো হয় না। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই শহর এতদিন ম্যানুয়াল ছিল। এখন দেশ উন্নত হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে শহর। বাড়ছে জনসংখ্যার পরিমাণ। তাই আমাদের এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মেকানিক্যাল সিস্টেমে যেতে হবে। সড়কে ম্যানুয়াল এবং মেকানিক্যাল সিস্টেম একইসঙ্গে চলতে পারে না। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেসব সড়কে যান্ত্রিক পরিবহন চলে সেসব সড়কে রিকশা চলতে দেওয়া হবে না। রিকশার কারণে যে শুধু যানজট হচ্ছে তা নয়, দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। আমরা বলছি শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যেন রিকশা না চলে। এতে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে যে শহর থেকেই রিকশা তুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। এছাড়া অবৈধ রিকশা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছি। আর বৈধ রিকশাগুলো ডিএনসিসির প্রধান সড়কের সংযুক্ত ৭৪ নেটওয়ার্কিং রোডে চলবে।
ফুটপাতকে উন্মুক্ত রাখতে হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, ‘জনদুর্ভোগ এড়াতে রিকশার পাশাপাশি ডিএনসিসির সব এলাকায় যেখানেই ফুটপাত দখল থাকবে সেখানে হাজির হবেন আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। রোববার থেকে ঘোষিত সড়কগুলোতে যদি ফুটপাত দখল করতে দেখা যায় সে যেই হোক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
যানজটের জন্য শুধু রিকশা দায়ী নয়, অবৈধ সিএনজি ও লেগুনাও দায়ী, এগুলো সরানো হবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘রিকশার পাশাপাশি অবৈধ সিএনজি অপসারণের কার্যক্রমও চলবে।’
অপরদিকে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ক্ষণিকের জন্য নগরবাসীর চলাচলের সমস্যা হতে পারে। নগরবাসী বৃহত্তর স্বার্থে এই স্বল্প সময়ের অসুবিধা মেনে নেবেন।’