• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

মহানগর

বিশ্বে হিজড়াদের প্রথম মাদরাসা উদ্বোধন ঢাকায়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২০

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশে আলাদা কোনো মাদরাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হিজড়াদের পড়ানোর কোনো ব্যবস্থা এদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার থেকে মাদরাসাটিতে শিক্ষার্থীদর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি এটি বিশ্বের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মাদরাসাটির মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আজাদ বলেন, এই শিক্ষার্থীদের পড়াতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই মাদরাসা নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসায় পড়ার ক্ষেত্রে কোন বয়স সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, অর্থাৎ হিজড়া জনগোষ্ঠীর যে কোন বয়সের মানুষ এই মাদরাসায় ভর্তি হতে পারবেন। এখানে পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থীদের কোন খরচ গুণতে হবে না। মরহুম আহমদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মাদরাসাটির যাবতীয় কার্যক্রম চলবে।

চারটি বিভাগে মাদরাসাটিতে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাদেরকে কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত করা হবে। নুরানী, নাজেরা হেফজ বিভাগ ও সাওয়ালে হাদিস এ চার বিভাগে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে এ মাদরাসায় ভর্তি করানো হবে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হিজড়াদের শেখানোর জন্য বেশকিছু বুথ রয়েছে। সেখানেও এ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মাদরাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আজিজ বলেন, হিজড়া সম্প্রদায় সমাজের কাছে দেশের কাছে বোঝা। এরা যেন রাষ্ট্রের কাছে বোঝা না হয়ে মানবসম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে সেজন্যই এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন জায়গায় মাদরাসাটির শাখা খোলার বিষয়েও চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। বাংলাদেশে হিজড়াদের ভোটাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা নারী বা পুরুষ নয়, বরং হিজড়া হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়া ভোট দেয়া, এমনকি নির্বাচনেও অংশ নিতে তাদের বাধা নেই। তবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মক্তবে ছেলেমেয়েদের যৌথ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে হিজড়াদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা দেখা যায় না।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ যতিন সরকার বলেন, এ ধরনের সম্প্রদায়ের জন্য শুধু মাদরাসায় কেনো গড়ে উঠবে? তাদেরকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সংযুক্ত করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা মানেই আনন্দের কথা। তবে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে শিক্ষা ব্যবস্থায় এ কমিউনিটিকে যুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

হিজড়া, বৃহন্নলা, কিন্নরী- যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বাংলাদেশে পরিবার ও সমাজে তারা নানাভাবে অবহেলিত ও অবাঞ্ছিত। তৃতীয় লিঙ্গের এ সম্প্রদায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নেচেগেয়ে, অথবা নতুন শিশু জন্ম নিলে বখশিশ তুলে জীবিকা চালিয়ে থাকেন। এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে এ সম্প্রদায়ের সুনিধি জানান, অধিকাংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। তবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলে তারাও সমাজে নানাভাবে অবদান রাখতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads