• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

ঐতিহ্য ফিরছে বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০২১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বুড়িগঙ্গা নদীর আদি স্রোতধারা বা চ্যানেলের হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে সংস্থাটি হাতিরঝিলের আদলে মাস্টারপ্ল্যান (খসড়া) তৈরি করেছে। এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আদি চ্যানেল খনন, অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এ চ্যানেলটি পুনরুদ্ধার হলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে আসবে। পাশাপাশি কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে এবং অধিকতর বাসযোগ্য হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসসি) প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। ইতোমধ্যে তারা খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শিগগির চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে। এর ওপর ভিত্তি করে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) প্রস্তুত করবে ডিএসসিসি। নদীর আদি চ্যানেল নিয়ে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বুড়িগঙ্গা তীরের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই চ্যানেলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা আদি চ্যানেলের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে ভবিষ্যতে কেউ নদীর জায়গা দখলের সুযোগ পাবে না।

লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ এলাকার বিভিন্ন মৌজা ঘিরে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল। বর্তমানে চ্যানেলটি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে। জমে থাকা কালো পানিতে মশার লার্ভার স্তর বসেছে। কামরাঙ্গীরচরের সেকশন থেকে হাজারীবাগের কালুনগর পর্যন্ত আদি চ্যানেল খালে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কালুনগর থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত আদি চ্যানেলের কোনো অস্তিত্ব বা চিহ্ন নেই। শুধু ছোট একটি খাল ঘুরে রায়েরবাজারের দিকে যেতে দেখা গেছে। আদি চ্যানেল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খননের দাবিতে বিভিন্ন সময় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী এবং সামাজিক সংগঠন। সবশেষ ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে এক নির্বাচনি জনসভায় চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি আদি চ্যানেল নিয়ে মহাপরিকল্পনা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। পরে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েক দফায় আদি চ্যানেল পরিদর্শন করেন। নতুন করে নেন ওই উদ্যোগ।

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের বড় একটি অংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে অনেক আগ থেকেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাইনি। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য কামরাঙ্গীরচরের সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কামরাঙ্গীরচরে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস করেন। তাদের অধিকাংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, কয়েক মাস আগে এমআইএসটি এই আদি চ্যানেল নিয়ে খসড়া প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। আশাকরি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপর ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের (ড্যাপ) পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংশোধিত ড্যাপে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানল পুনরুদ্ধারে ডিএসসিসি যে উদ্যোগ নিয়েছে, রাজউক তাতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads