• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
বায়ুদূষণে নাকাল গাজীপুর

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

বায়ুদূষণে নাকাল গাজীপুর

  • গাজীপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

গাজীপুরে সারা বছর ধরেই চলছে যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এসব উন্নয়ন কাজে পরিবেশ যাতে বিনষ্ট না হয় তার জন্য নির্দেশনা থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই। এ ছাড়া শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার ধোঁয়াসহ ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়ার আগ্রাসনে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

এ কারণে বায়ুদূষণ এখন গাজীপুরের সব শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি দিনদিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বড় বড় নির্মাণ কাজ চলায় সর্বত্রই এখন ধুলাবালি।

বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক তপন কান্তি সরকার বলেন, প্রতিদিনই হাঁচি-কাশি নিয়ে রোগী আসছে। অ্যাজমা-অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস, গলাব্যথা, শ্বাসতন্ত্রে ক্ষতসহ নানা ধরনের রোগী আসছে। বায়ুদূষণ এর বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে গত তিন-চার বছর ধরে চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। ওই কাজের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে ব্যাপক ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে। ধুলাবালির কারণে ওই পথে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজের সময় সড়কে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও পানি ছিটানো হচ্ছে খুবই কম, যার কারণে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ সড়ক ধরে এগোলে টঙ্গী স্টেডিয়ামের সামনে, টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা, বোর্ডবাজার এলাকাসহ মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সামনেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। আরেকটু সামনে কুনিয়া বড়বাড়ি থেকে মালেকের বাড়ি, চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত একই অবস্থা। গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা জাগ্রত চৌরঙ্গী ভাস্কর্য পর্যন্ত সড়কে ধুলাবালিতে কুয়াশার মতো অবস্থা হয়ে আছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দেড় হাজার পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য ছোট-বড় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। রাস্তার পাশে দোকানপাট, রিকশাযাত্রী ও পায়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এসব শিল্প-কারখানার দূষিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আশপাশের খাল-বিলে। এতে করে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, একই সঙ্গে বায়ুদূষণ হচ্ছে। দূষণ রোধে গাজীপুরে হাতে-গোনা কয়েকটি শিল্প-কারখানা ‘গ্রিন কারখানা’ হিসেবে ঘোষণা করলেও বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা থেকে মারাত্মকভাবে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ হচ্ছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, দোকানের সামনে আধাঘণ্টা বসে থাকেন, দেখবেন সড়কের কাজের ধুলাবালিতে আপনাকে আর চেনার উপায় থাকবে না। শুনেছি কাজের সময় পানি দেওয়ার কথা; কিন্তু পানি দিতে দেখা যায় খুব কম সময়ই। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় পানি ছিটানো হয় না। তিনি আরো বলেন, রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে ধুলার জন্য বের হওয়া যায় না। কালীগঞ্জ এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলশিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, তাদের এলাকায় এখানো ২০-২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় গাছপালা মরে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) গাজীপুর আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান খান বলেন, ইটভাটার যে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা, অনেকেই তা করছেন না। ফলে বাতাসে কার্বন মিশে বায়ুদূষণ ঘটছে। গাজীপুরে অনেক ইটভাটা বায়ুদূষণ করছে। তা ছাড়া কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি, ব্যাটারি তৈরির কারখানা ও স্টিল কারখানাও বায়ু দূষণে ভূমিকা রাখছে। গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কলকারখানার নির্গত দূষিত বাতাস, বিভিন্ন রাস্তার চলমান উন্নয়ন কাজ, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, অসংখ্য ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য অন্যতম। গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. সালাম সরকার বলেন, সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাসমান ক্ষতিকর বস্তুকণা এখনকার বাতাসে বিরাজ করছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব। রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণহীন খোঁড়াখুঁড়ি ও অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ বন্ধের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করলে ফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads