সিলেটের বিয়ানীবাজার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার দুই শ বছরের পুরনো মসজিদ সংস্কার নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের উদ্ভূত পরিস্থিতির কোনো সমাধান হয়নি। গত মঙ্গলবার সুতারকান্দি আইসিপিতে দুই দেশের কমান্ডিং অফিসার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে পুরনো এই জামে মসজিদের পাশে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের স্ট্রাকচার ভেঙে ফেলার জন্য বিজিবিকে চাপ প্রয়োগ করে বিএসএফ। এ সময় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্মরণ করিয়ে জিরো লাইনের ২০ গজের মধ্য থেকে বিএসএফকে বাঙ্কার সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে বিজিবি। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকলে অমীমাংসিত অবস্থায় বৈঠক শেষ হয়। তবে মসজিদ নির্মাণে বিএসএফ বাধা দেবে না বলে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেছে। সীমান্তের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বলেছেন, আবারো পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শিগগিরই এর সমাধান হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন-৭ বিএসএফের অধিনায়ক বিএস মিনহাজ।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, পতাকা বৈঠকে বিএসএফ মসজিদ নির্মাণে বাধা দেবে না বলে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করে। বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের খননকৃত বাঙ্কার তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায় বিজিবি। উত্তরে বিএসএফ জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় বাহিনী জিরো লাইনের ১৫০ গজের ভেতরে প্রবেশ করে কোনো ধরনের বাধা প্রদান করতে পারে না। তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে নো ম্যান্স ল্যান্ডের ১৫০ গজের মধ্যে নির্মিত দুই শ বছরের পুরনো মসজিদ পুনর্নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেছে। এ নিয়ে আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে মসজিদ নির্মাণে বাধা না দেওয়া এবং বাঙ্কার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএসএফ আমাদের বক্তব্য আমলে নিয়েছে এবং মসজিদ নির্মাণে বাধা প্রদান করবে না বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদের নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএসএফ তাদের বাঙ্কার সরায়নি। তিনি বলেন, এ নিয়ে আবারো পতাকা বৈঠক হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার ১৩৫৭নং পিলারের ভেতরে বাংলাদেশ অংশে গজুকাটা গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অবস্থান। ২০০ বছরের পুরনো মসজিদের পাকা দালান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী সংলগ্ন এলাকায় নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণকাজ চলাকালে বিএসএফ আগে একবার বাধা দিলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তা সমাধান হয়। এদিকে, দীর্ঘ তিন বছর পর গত সপ্তাহে বিজিবি-৫২ এর সঙ্গে বিএসএফের বৈঠকে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ কাজ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এ বিষয়ে বিএসএফ বাধা প্রদান করবে না বলে আশ্বস্ত করে। মসজিদ নির্মাণের কাজ ফের শুরু হলে গত শনিবার বিএসএফ তাতে বাধা প্রদান করে।
