• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ছে ওয়াসার পানির দাম

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

বার বার জিম্মি রাজধানীবাসী

বাড়ছে ওয়াসার পানির দাম

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২১

কোনো অজুহাত ছাড়াই গ্রাহকদের জিম্মি করে গত ১২ বছরে ১৩ বার পানির দাম ও সুয়ারেজ চার্জ বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করোনা মহামারীর মধ্যে গত অর্থবছরেও এ খাতে দাম বাড়িয়েছিল সংস্থাটি। আগামী অর্থবছরে আবারো সুয়ারেজ ও পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। প্রতি বছরই এ খাতের সেবামূল্য বাড়ানোয় ক্ষোভ বাড়ছে গ্রাহকদের। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সমন্বয় করতেই দাম বাড়ানো হচ্ছে।      

জানা যায়, গত বছর মার্চ মাসে এক লাফে পানির দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা, যা জুলাই ’২০ থেকে কার্যকর হয়। এবারো একই উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছেন। চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা ওয়াসার বোর্ডসভায় এই প্রস্তাব অনুমোদন পেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী ১ জুলাই থেকে পানির বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে। এই দাম কার্যকর হলে গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়বে।

সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ ঢাকা ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদার পানি ও সুয়ারেজের দাম আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাবপত্র তৈরি করে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়ের কাছে পাঠান। সেদিনই সেটির অনুমোদন দেন উত্তম কুমার রায়। তার অনুমোদনের পর ওই দিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের কাছে ফাইলটি পাঠানো হয়। তিনিও প্রস্তাবপত্রে স্বাক্ষর করেন। গত ১৪ মার্চ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি বোর্ড সচিবের কাছে পাঠান এবং আগামী বোর্ডসভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের  জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

এ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হলে তা হবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রতি হাজার লিটার পানির বর্তমান দাম ৪০ টাকা। সেটি বেড়ে হবে ৪২ টাকা। একই হারে বাড়বে সুয়ারেজের বিল।

গত বছর আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ছিল ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা চার পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি। মন্ত্রণালয় আবাসিকে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে ৪০ টাকা প্রতি হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণের পক্ষে মত দেয়। গত বছরের ১ মার্চ থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ওয়াসা। একই হারে বাড়ানো হয় সুয়ারেজের বিল।

এভাবে সুয়ারেজ ও পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বহুবার ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি করেছে নাগরিক সমাজ। কিন্তু নাগরিকদের কোনো দাবি আমলে না নিয়ে সেবা চার্জ বাড়িয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। গত বছরের ১৫ এপ্রিল পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল এবং পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখা। এভাবে পানির দাম না বাড়ানোর জন্য দলটির পক্ষ থেকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। জুলাই ’২০ থেকে ঠিকই বাড়তি দামে বিল করেছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

সংগঠনের ঢাকা নগরের ইনচার্জ নাঈমা খালেদ মনিকা বলেন, গত ১২ বছরে মোট ১৩ বার পানি ও সুয়ারেজ সেবা চার্জ বাড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এক বছরে দুবার সেবা চার্জ বাড়িয়েছে ওয়াসা। সব মিলিয়ে গত এক যুগে সেবা চার্জ প্রায় চারগুণ বেড়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকায় আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। এরপর কয়েক দফায় সেই দাম বেড়ে আবাসিকে হয়েছে ১১ টাকা ৫৭ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে হয়েছে ৩৭ টাকা ৪ পয়সা।

ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ওয়াসার বোর্ড প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে। কিন্তু গতবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে পানির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বছর কোনো ধরনের চার্জ না বাড়ানো প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে অস্বচ্ছতা বা নিয়ম লঙ্ঘনের কিছু যুক্ত নেই। কারণ মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম ও সুয়ারেজের ব্যবস্থাপনার মূল্য বাড়ানোর ম্যান্ডেট রয়েছে সংস্থাটির, তার ভিত্তিতেই ঢাকা ওয়াসা এবারো সুয়ারেজ ও পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক বলেন, ‘ওয়াসা যে আইনের অজুহাত দেয়, সেটি একটা খোঁড়া যুক্তি। আর তাদের সার্ভিস বা সেবার মানেরও তো কোনো উন্নতি হয়নি যে তারা দাম বাড়াবে। বরং পানির মান ও সরবরাহ নিয়ে ওয়াসার আওতাধীন এলাকায় মানুষের বিস্তর অভিযোগ আছে। অনেকেই ঠিকমতো পানি পায় না। পেলেও সেটির মান একেবারেই খারাপ। ওয়াসা সুয়ারেজেরও বিল নেয়। অথচ সুয়ারেজের ব্যবস্থাপনা তারা করে না। আমি বলব, ওয়াসা একটা অত্যাচারী ও জবরদস্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখন এমন অবস্থা যে, প্রতিবাদেরও সুযোগ নেই। এই সুযোগে ওয়াসা যা খুশি তা-ই করে যাচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদারের মতামত জানার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি। তবে ওয়াসার জনতথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক বলেন, ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানি ও সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা দাম বাড়াতে পারে। পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রাখতে এবং বর্তমান মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে এবং আইন মেনেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে অন্তত ১৭ টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads