• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
ডেঙ্গুর উপদ্রব মাত্র চার এলাকাতেই সীমাবদ্ধ!

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

ডেঙ্গুর উপদ্রব মাত্র চার এলাকাতেই সীমাবদ্ধ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০২১

বর্ষাপূর্ব মশার জরিপে রাজধানীর চারটি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই চার এলাকা হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন, এর বাইরে কি ডেঙ্গুর হটস্পট নেই? বিষয়টি নিয়ে খোদ জরিপকারীরাই বলছেন, জরিপে উঠে আসা শুধু চারটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ওপর নির্ভর করা যাবে না। অন্য এলাকাতেও ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নগরবাসী ও সিটি করপোরেশনের উচিত, যেখানেই মশার প্রজননস্থল রয়েছে, সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। আর কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পুরনো এই পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে অ্যাডাল্ট মশা সার্ভে করা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় মশার লার্ভার ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ বছরের জরিপটি ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে পরিচালনা করা হয়। গত ৬ মে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জরিপকাজে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপটি যখন শুরু হয় তখন লকডাউন চলে আসে। এতে ৯৮টি ওয়ার্ড সার্ভে করার কথা থাকলেও ৬৯টি ওয়ার্ডে করা গেছে। জরিপে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। যে দুটি ওয়ার্ডের কথা বলা হয়েছে সেটাকে হটস্পট বলা যাবে না।’

ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘মশার ট্রেইন্থ অ্যানালাইসিস করার জন্য পরিচালিত এই সার্ভেটাকে আমরা বর্ষাপূর্ব সার্ভে বলে থাকি। গবেষণা পারপাসে এই সার্ভেটি করা হয়। এতে যে রেজাল্ট এসেছে তাতে এ বছর এডিস মশাবাহিত কোনো রোগ হবে কি হবে না, তা ফোরকাস্ট করা যায় না। এটা জাস্ট একটা রেজাল্ট আপনাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখানে দুই সিটির দুটি ওয়ার্ডে জরিপের ইনডেক্স বেশি বা ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে। ইনডেক্স কোথাও যদি ২০-এর ওপরে পাওয়া যায় তখন পূর্বাভাস দেওয়া হয়, এই এলাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া হতে পারে। এখন আমরা ওই দুটি ওয়ার্ডে ইনডেক্স বেশি পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন এটা কিন্তু এমন কোনো বেশি রেজাল্ট না। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও যে ১০ থেকে ১৫-এর বেশি রয়েছে সেটিও কিন্তু বেশি নয়। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এডিস মশা জন্মানোর যে পাত্র সেটি কিন্তু বাসার বাইরে নেই। এখন এই সার্ভেটি করা হয় লার্ভা জন্মানোর পাত্র কী পরিমাণ আছে সেটি দেখার জন্য। তবে এটি দিয়ে খুব বেশি কিছু কমেন্ট করা ঠিক না। বর্ষাপূর্ব সার্ভে দিয়ে আমরা কখনো কমেন্ট করি না। কমেন্টস করা হয় জুন মাসের সার্ভেতে।’

সার্ভের পদ্ধতি প্রসঙ্গে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বলেন, ‘একটি ওয়ার্ডে ৩০টি বাসা সিলেক্ট করা হয়। সেখানে দুটি টিম যায়। প্রতি টিমে দুজন করে থাকে। ওই দুই টিমে একজন সুপারভাইজার থাকে। এই ৩০টি বাসা থেকে আমরা নমুনা সংগ্রহ করি। সেটা এনে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে হিসাব করা হয়। তারপর একটা সূত্র দিয়ে আমর ইনডেক্স করি। এই সূত্র দিয়েই হাউজ ইনডেক্স, কনটেইনার প্রিকোয়েন্সি, কনটেইনার প্রোডাক্টিভিটি, এগুলো বের করি। এরপর বোঝার চেষ্টা করি আসলে কী হতে পারে।’

চারটি হটস্পট প্রসঙ্গে তিনি নিজেই প্রশ্নে রেখে বলেন, ‘তার মানে অন্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু হবে না তা নয়। হয়নি, পরে হবে। এ জন্যই আমরা শুধু ওই চারটি এলাকাকে ফোকাস করতে চাই না। তাই ওই এলাকা নিয়ে আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না।’

এই গবেষক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এটাকে আমরা এভাবে বলতে পারি, বর্ষাপূর্ব সার্ভেতে খুব বেশি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও এডিস মশা পাওয়া গেছে। এডিস মশা যেহেতু আছে সেহেতু বৃষ্টি হলে যেকোনো স্থানে এর ঘনত্ব বাড়তে পারে। তাই এডিস মশা জন্মানোর যে পাত্রগুলো আছে, সেগুলো সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর যৌথ উদ্যোগে অপারেশন করা জরুরি। এই মুহূর্তের কাজ হবে এডিস মশা যেন ডিম পাড়তে না পারে। এ জন্য শুধু ওই চারটি স্থানে বেশি নজর দেওয়ার সুযোগ নেই।’

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ওই দুটি এলাকায় নিয়মিত অ্যাডাল্টিসাইডিং ও লার্ভিসাইডিং বৃদ্ধি করেছি। এ ছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে। অন্যান্য এলাকাতেও নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের চিরুনি অভিযান অব্যাহত আছে। গত বছরও আমরা সাতবার চিরুনি অভিযান করেছি। এ জন্য আমাদের সক্ষমতাও বাড়িয়েছি। নগরবাসীকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, তারা যেন তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দেন।’

কীটবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, ‘অন্য দেশে লার্ভা নয়, অ্যাডাল্ট সার্ভে করে। এটি আরো বেশি রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়। আমি গত বছরও বলেছিলাম, এই সার্ভেটা বাদ দিয়ে আধুনিক সার্ভে করেন। বিভিন্ন দেশে অ্যাডাল্ট মশা ধরে তারা টাইম টু টাইম দেখে, সেখানে কোনো ভাইরাস আছে কি না। কারণ, শুধু মশা থাকলেই তো হবে না, মশার মধ্যে ভাইরাস আছে কি না সেটাও দেখতে হবে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads