• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

সকাল ও সন্ধ্যায় যানজটের তীব্রতা বাড়ে কয়েকগুণ

নিত্য যানজটে ভোগান্তি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের কারণে কর্মব্যস্ত মানুষের গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লেগে যাচ্ছে। সরকারি বন্ধের দিনগুলিতে তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন নিয়মিত যানজট দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে। তবে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় যানজটের তীব্রতা বাড়ে কয়েকগুণ। এতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে। সকালে কাজে বের হওয়া বা অফিসগামী মানুষরা এ যানজটের কবলে পড়েছেন।

গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ভোগান্তি আরো বেড়েছে। মাঝপথ থেকে যারা বাসে উঠতে চান তাদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। একই রকম চিত্র থাকে বিকেলে বা সন্ধ্যায় যখন অফিস শেষ হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক, মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সড়ক, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, আগাদগেট, খামারবাড়ি, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, বারিধারা, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, মতিঝিল, পল্টন, পুরান ঢাকা, মিরপুর, উত্তরা এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলিতেও তীব্র যানজট। আর এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি মানুষ।

ভুক্তভোগীদের একজন তৌসিফ শেখ। তিনি সাইন্স ল্যাবে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ করে বিকাল ৪টার মধ্যে তাকে অফিসে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু তিনি অফিস পৌঁছাতে পেরেছেন সন্ধ্যা ৬টায়। তিনি বলেন, সড়কে এত যানজট যে অনেক চেষ্টা করেও নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারলাম না।

ভুক্তভোগীদের আরেকজন কামাল। মোহাম্মদপুরের বছিলা আবাসিক এলাকা থেকে দুপুর ১২টায় রওনা দেন এলেনবাড়ীর উদ্দেশে। দুপুর ১টায় সেখানে তার একটি সভায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছেছেন দুপুর দেড়টায়। গাবতলী-শ্যামলী-আগারগাঁও-মহাখালী-গুলশান রুটে চলাচলকারী আলিফ পরিবহনের চালক মালেক বলেন, বিশেষ করে সকালে এবং সন্ধ্যায় যানজটের ভয়াবহতা বেশি থাকে। অধিকাংশ সড়কেই ব্যাপক যানজট দেখা গেছে। কিছু কিছু স্থানে যানজট না থাকলেও গাড়ির গতি ছিল খুবই কম। প্রতিদিনের এমন যানজটের কারণে আমাদের ট্রিপের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। রাজধানীর ফার্মগেট-নিউমার্কেট রুটে চলাচলকারী দেওয়ান পরিবহনের যাত্রী ইমন। তিনি বলেন, চাকরি করার কারণে প্রতিদিন সকালে ফার্মগেট থেকে গুলশান পর্যন্ত আসতে হয়। বাসা থেকে বের হয়ে দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর যদি কোনোমতে বাসে উঠতে পারি এরপর শুরু হয় যানজটের ভোগান্তি। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে বাসে অপেক্ষা করতে হয়। এটা প্রতিদিনের বিড়ম্বনা। সম্প্রতি যানজট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

ব্যবসায়ী আহসান হাবীব, নতুন বাজার থেকে রাইদা বাসে মুগদা যাচ্ছিলেন। মাঝপথে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যবসার কাজে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। কিন্তু যানজটে পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আজ উত্তর বাড্ডা, লিংক রোড, মধ্য বাড্ডা, মেরুল, রামপুরা ব্রিজ, রামপুরা বাজার, আবুল হোটেল প্রত্যেকটি রাস্তায় ব্যাপক যানজট। এ পথটুকু আসতেই দীর্ঘ সময় যানজটে বসে থাকতে হলো। এই যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র।

রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মাহফুজুল বলেন, সকালে সড়কে গাড়ির চাপ একটু বেশি থাকে। এছাড়া অফিসগামী এবং কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড় থাকে। এ কারণে সকালের দিকে কিছুটা যানজট হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, যেসব সড়কে রিকশা চলাচল করে সেসব সড়কে যানবাহনের গতি কম থাকে। এ জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সড়কে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। যে কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

রাজধানীর যানজটে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে-রাজধানীর যানজটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলে গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে সম্প্রতি এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

 সেখানে জানানো হয়, শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার গ্রোথের কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। দেশের মানুষ যারা শহরে বাস করেন তাদের অধিকাংশ বাস করেন ঢাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে সাড়ে ৩ শতাংশ শহরে। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি। 

এ ছাড়া লকডাউন উঠে যাওয়ায় বাইরে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য আগের থেকে অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি মেট্রোরেল, বিআরটি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। এসব কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জনদুর্ভোগ আস্তে আস্তে বাড়ছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads