চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে হাজার হাজার নলকূপ বিকল, পানি নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। এর প্রধান কারণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। চট্টগ্রাম ও খুলনা বলে কথা নয়, আসলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নেমে যাওয়ার সমস্যাটি কমবেশি সারা দেশের। বর্ষাকালে সমস্যাটি বোঝা না গেলেও শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছরই খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়। সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি উত্তরাঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলে সমস্যার স্বরূপ ভিন্ন। সেখানে অতিমাত্রায় লবণাক্ততার কারণে খাবার পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দেশের কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের বিষ। পানিতে স্বল্পমাত্রায় আর্সেনিক খুব একটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এটা যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন সে পানি মারাত্মক স্বাস্থ্যহানিকর। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার ফলে দেখা দেয় আর্সেনিকোসিস রোগ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য মানুষ আজ এই রোগের শিকার।
পানিঘটিত সমস্যার স্বরূপ যাই হোক না কেন, সবই পরিবেশ বিপর্যয়ের সাক্ষ্য বহন করে। জলবায়ু পরিবর্তন তথা পরিবেশিক ভারসাম্যহীনতার সমস্যা আজ বিশ্বব্যাপী। জলবায়ুর পরিবর্তন হেতু সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলা বিশ্বমানবের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও সমস্যাটি প্রকট। বলার অপেক্ষা রাখে না, সমস্যাটিকে প্রবল করে তুলেছি আমরা নিজেরাই। পানির স্তর অস্বাভাবিক মাত্রায় নিচে নেমে যাওয়ার একটি বড় কারণ ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষিব্যবস্থাকে আমরা করে তুলেছি প্রধানত সেচনির্ভর। নদী ও খালে পানি না থাকায় পাওয়ারপাম্পে সারফেস ওয়াটার সেচ এখন নেই বললেই চলে। নদী ও খাল-বিলের পারেও বসেছে গভীর নলকূপ। খাবার পানিও উঠছে গভীর নলকূপে অথবা সাবমার্সিবল পাম্পে। এতে চাপ পড়ছে মাটির নিচের পানির স্তরে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার পথ একটাই, নদীসহ খাল ও অন্যান্য জলাশয়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।