অবরোধ ঘিরে সহিংসতার কারণে দেশে-বিদেশে বিপুল সমালোচনার মুখে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের ঘোষণা সংবলিত ভিশন-২০৩০ রূপকল্প জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল বিএনপি। এখানেই থেমে থাকেনি দলটি, বরং তা বাস্তবায়নেও কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। খোদ দলের চেয়ারপারসন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারারুদ্ধ হলেও একই ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।
এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে ভিশন-২০৩০ রূপকল্প ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, এ ঘোষণার আলোকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছেন তারা। জনগণের অশান্তি না বাড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার সাজা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি চাইলেও দল তাতে সায় দেয়নি। বরং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মূল্যে এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীতে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসার রাজনীতি আর করবে না বিএনপি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালে জন্য অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যায় বিএনপি, যা ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে রূপ নেয়। ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য পেট্রোল বোমা হামলায় মানুষ আক্রান্ত হয়। কেউ কেউ মারা যান। এর দায় বিএনপির ওপর চাপায় সরকার। যদিও বিএনপি তা অস্বীকার করে পাল্টা সরকারের ওপর দোষ চাপায়। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির কাউন্সিলে ভিশন-২০৩০-এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। পরে ২০১৭ সালের ১০ মে রাজধানীর একটি হোটেলে ভিশন-২০৩০ রূপকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। তাতে ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬ দফা উপস্থাপন করা হয়।
রূপকল্পে বলা হয়, বিএনপি ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী নয়। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তারা। নিত্যদিনের জন-আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে তাদের সম্পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায় বিএনপি। এ উদ্দেশ্যে সুধীসমাজ, জনমত জরিপ, জনগণের চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সর্বসাধারণের অভিজ্ঞতার নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনার লক্ষ্য তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। বিশেষ করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বাস্তবায়নের কথাও বলেন তিনি। ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’- এমন অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দেওয়ার ঘোষণাও দেন বিএনপিপ্রধান।
এরই অংশ হিসেবে সাজা হওয়ার আগে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে বলেন খালেদা জিয়া। এমনকি একটি গাড়িতেও যেন ঢিল না পড়ে সে নির্দেশও দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে। আবার দেশে জঙ্গিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন আলোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না। দলের ভিশন-২০৩০ রূপকল্পে বিষয়টি স্পস্ট করা হয়েছে।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর সূচনা হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে। বিএনপির আমলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তার দল জড়িতদের আটক করে বিচারের মুখোমুখি করেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার জঙ্গিদের হত্যা করে তাদের পেছনের শক্তিকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।