বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে বাইরে দৃশ্যত ঐক্য হলেও ভেতরে অপ্রতিরোধ্য ফাটল ধরেছে। ক্ষোভে ফুঁসছে শরিকরা। পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। তারা বলছেন, প্রধান দল বিএনপি ও দ্বিতীয় অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর অদূরদর্শিতা, খামখেয়ালি এবং সমন্বয়হীনতার ফসল যাচ্ছে সরকারের ঘরে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সিলেট ছাড়ছে না জামায়াত।
এদিকে সভা-সমাবেশে জোটের প্রধান দল বিএনপি মহাসচিব বলছেন, জাতীয় ঐক্য হলে সরকার তিন দিনও টিকবে না। তার এ কথার পর জোটের একাধিক শরিক নেতা মন্তব্য করেছেন- ‘জাতীয় ঐক্য তো দূরের কথা, আগে নিজ দল বা জোটের ঐক্য ফেরানোর প্রয়োজন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্য তো শুধু একটা নির্বাচনের বিষয় নয়। দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের। আলোচনা চলছে, আশা করছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন- এই তিন ইস্যুতে ১৯৯৮ সালে চারদলীয় জোট গঠন করে জামায়াত। এখন তার কলেবর বেড়ে ২০ দলে রূপ নিয়েছে। নতুন শরিকদের মধ্যে কেউ কেউ আছে তাদের ঘোর বিরোধী। তাদের কর্মকাণ্ডে দিন দিন ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছেই। নতুন করে ক্ষোভ বিস্ফোরণে রূপ নিচ্ছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে। জামায়াতও তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। গাজীপুর, রংপুর, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশালে ছাড় দিলেও সিলেটের বেলায় অনড় জামায়াত। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমিরকে তারা নির্বাচনে রেখে দিচ্ছে।
গত উপজেলা নির্বাচন থেকে জামায়াতের রহস্যময় আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপিসহ অন্য শরিকরা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পর্দার আড়ালে সমঝোতার অভিযোগ করেছে শরিকরা। কারণ যে ইউপিতে জামায়াতের ভাইস চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়েছেন সেখানেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জিতেছেন। রংপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে ফাটলের পরিধি আরো বেড়েছে। সেখানে জামায়াত কোনো ভূমিকাই রাখেনি। দলটির কথিত ২০ হাজার ‘রিজার্ভ ভোট’ ধানের শীষে পড়েনি। সর্বশেষ গাজীপুরেও চড়া মূল্য দিতে হয়েছে বিএনপিকে। একক মেয়র প্রার্থী করতে কাউন্সিলর পদে পাঁচটি আসন ছেড়ে দিতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘সিলেটে আমাদের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সব ছেড়ে দিয়ে আমরা মাত্র একটা চেয়েছিলাম। বিএনপি ছাড় দেয়নি। জামায়াতের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, জোট হয়েছে সেটা জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক।
এদিকে জোটের সিদ্ধান্ত আলোচনা সাপেক্ষে হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি তা পাত্তাই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ শরিকদের। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য বিকালে জোটের মিটিং ডাকে। অন্যদিকে সকালেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে। এমন পরিস্থিতিতে শরিকরা হিসাব মেলাতে পারছে না। তাদের কেউ কেউ উল্টো প্রশ্নই করেছেন- বিএনপি কি ভারতের থিংট্যাঙ্কারদের চাওয়া অনুযায়ী জামায়াতকে ঠেলে দিচ্ছে নাকি জামায়াতই অন্য পথে হাঁটছে।
জোটের প্রধান দল বিএনপি মহাসচিব বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন কিন্তু তার দলের বেহাল অবস্থার কথা একবার চিন্তা করার দরকার আছে বলে মনে করছেন বিএনপির সাবেক নেতা কর্নেল (অব.) অলির দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, সিলেটে জামায়াত তাদের প্রার্থী রেখে দিচ্ছে। তারা কি জোটের ভালো চায়, চলমান আন্দোলনে ঘি নাকি পানি ঢালছে। এ সময় তিনি জোটের মধ্যে প্রচণ্ড সমন্ব্বয়হীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জোটের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। কথা কাজের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান দল বিএনপি অন্য শরিকদের কোনো দামই দিচ্ছে না। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে, মিটিং ডেকে চা-চক্রের পর ঘোষণা দেয়। কোনো কোনো সময় তাও হচ্ছে না। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য বিকালে মিটিং ডাকে অন্যদিকে সকালেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে। তাহলে মিটিং ডাকার কী প্রয়োজন ছিল- এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।