• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে

লোগো আ.লীগ-বিএনপি

রাজনীতি

উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে জাতীয় রাজনীতিতে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এই উত্তাপ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কথার লড়াই রাজপথে গড়াতে পারে। তারা আরো বলছেন, শক্তি দেখাতে মাঠে নামতে পারে বাম দল, ইসলামী দল এবং অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দলও। প্রধান দুই শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে আবারো ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিএনপির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠবে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি। ইতোমধ্যেই তারা আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামলে তাদের সঙ্গে থাকবে শরিক ২০ দল।

এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অংশ হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম একই সময়ে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। একই সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করবেন ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত ‘বাম গণতান্ত্রিক জোটে’র নেতারা।

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আগামী মাসে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার ইঙ্গিত দিয়েছে। বসে নেই আওয়ামী লীগও। তাদের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে নানা ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, তারা মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারের অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে। বিরোধী দলগুলো যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে নজর রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারকে এ সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী ও পক্ষের রাজনৈতিক আন্দোলনও মোকাবেলা করতে হবে। মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মোকাবেলা করতে হতে পারে। এসব বিবেচনায় রাজনীতির মাঠ বিরোধী দল যেমন দখলে রাখার চেষ্টা করবে তেমনি সরকারকে চাপমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চাইবেন রাজনীতির মাঠ তাদের অনুকূলেই যেন থাকে।

ঈদের দিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যদি নির্বাচন বানচালের বা প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা বিএনপি করে তাহলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে একই দিন বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারকে অতীতের মতো আর একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে বা সব দল মেনে নেবে এমন কোনো ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রক্রিয়া বের করা যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কোনো লক্ষণও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ফলে আগামী ৩-৪ মাস রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটবে। দেশি-বিদেশিদের নজরও থাকবে রাজনীতির দিকে। তাই রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ থাকবে না।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তারেক শামসুর রেহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুটি বড় পক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সক্রিয় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এখন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এর পাল্টা জবাব দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। এতে করে সামনের দিকে রাজনীতির মাঠ আরো গরম হবে।

রাজনীতির এই বিশ্লেষক বলেন, দেশের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতারা যত কথা কম বলবেন ততই মঙ্গল। নেতাদের নামে কটূক্তি, কটাক্ষ না করাই ভালো হবে। তা না হলে ভয় লাগছে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। প্রধান দুই পক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐকমত্যে না এলে দেশে আবারো ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি হতে পারে।  

এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ ঢাকায় একটি বড় সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। সেখানে ১৪ দল, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই সমাবেশে যুক্তফ্রন্ট অংশ নিতে পারে।

ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি পালন করা হবে। এর বাইরে সরকারের ব্যর্থতার চিত্রগুলো লিফলেট আকারে মানুষের সামনে তুলে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবেন তারা। রাজপথে কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে অনলাইনে সরকারের দুর্নীতির চিত্রগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন মাঠেই থাকবেন। সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো মাঠে নামলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকবে না। বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি তাদের দাবি আদায় করতে রাজপথে নামবে। এখন তারা আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads