• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
জাতীয় ঐক্যে থাকছে না বিকল্পধারা

ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

যুক্তফ্রন্টেও ভাঙনের সুর

জাতীয় ঐক্যে থাকছে না বিকল্পধারা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০২ অক্টোবর ২০১৮

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য থেকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে পারে বিকল্পধারা। একই সঙ্গে ভাঙতে পারে ত্রিদলীয় যুক্তফ্রন্টও। ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান, নেতৃত্ব প্রদানসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে বৃহত্তর ঐক্যে। এই পরিস্থিতির জন্য বি. চৌধুরীর চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ভাবা হচ্ছে বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে। এই প্লাটফর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে তিনি কঠিন সব দাবি-দাওয়া ও শর্ত দিয়েছেন বিএনপিসহ ২০ দলের প্রতি। রাজনীতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে মাহী বি. চৌধুরীর ইচ্ছা গুরুত্ব পাচ্ছে বিকল্পধারায়। দুদকের মামলার জালে আটক দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নানের প্রসঙ্গটিও বেশ আলোচিত রাজনীতির মাঠে। এ প্রসঙ্গে মাহী বি. চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কিছুদিন আগে ২০ দলের বৈঠক হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে ২০ দলের প্রতিনিধিত্ব করবে বিএনপি। সুতরাং বিএনপি একভাবে জামায়াতেরও প্রতিনিধিত্ব করবে। এ পরিস্থিতিতে দলটিকে জাতীয় ঐক্যে সম্পৃক্ত করা যাবে না।

এদিকে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমও। মাহী বি. চৌধুরীর বেঁকে বসা বা গুচ্ছ শর্তের আড়ালে কী আছে সে গোমর ফাঁস করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে বিএনপিও।

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপকার। আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নাগরিক ঐক্য ও বিকল্পধারার সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফন্টের রূপকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এই দুই প্রবীণ ব্যক্তি। তারাই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্যোক্তা। এই উদ্যোগের প্রধান নেতা কে হবেন তা নিয়ে শুরু থেকেই দুটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষের দাবি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. কামাল হোসেনের গুরুত্ব বেশি। অন্য পক্ষের দাবি- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন বি. চৌধুরী। নিজ নিজ অবস্থানের ভিত্তিতে তাদের মধ্য থেকেই একজন জোট বা ঐক্যের প্রধান হবেন। তবে ওই পর্যন্তই। এখনো এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বি. চৌধুরী বিভিন্ন সময় নানা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ড. কামাল এবং আমি একই স্কুলের ছাত্র, ড. কামাল আমার জুনিয়র ছিলেন।’ আবার বি. চৌধুরী বয়সে সিনিয়র হলেও তাকে প্রধান নেতা মানতে নারাজ ড. কামাল হোসেন। তাই জোটের বৈঠকগুলো তিনি করেছেন তার বেইলি রোডের বাসায়। সম্প্রতি বি. চৌধুরীর বাসায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গেছেন ড. কামাল।

দেন-দরবারসহ নানা প্রক্রিয়ার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাবেশের ব্যানারে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সম্মেলন হয়। তাতে ৫ দফা দাবি জানানো হয় সরকারের উদ্দেশে। যুক্তফন্টের প্রধান দল বিকল্পধারা বাংলাদেশের তরফ থেকে বিএনপির কাছে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০টি দাবি করেন মাহী বি. চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি শর্ত দিয়েছেন, প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত এবং পরোক্ষ বিরোধীদের কাউকেই জাতীয় ঐক্যে নেবে না তার ফ্রন্ট। ঐক্যে আসতে হলে ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একই বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীও। কিন্তু তাদের সঙ্গে একমত নন ফ্রন্টের সদস্য নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, আমাদের ঐক্য হবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সঙ্গে নয়। আর ড. কামাল বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশে জামায়াতের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের দলীয় প্রতীক নেই, নিবন্ধনও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি আদালতে ঝুলছে।

ক’দিন আগে সাংবাদিক আতাউস সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভার আগে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে সঙ্কট চলছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের জন্য বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। কে স্বাধীনতাবিরোধী, কে বিরোধী না- এখন এই প্রশ্ন না করে মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে এক হতে হবে।

এদিকে জামায়াত প্রশ্নে বিকল্পধারার অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেছেন, বি. চৌধুরী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছেন, রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তখন ভালো ছিল, এখন খারাপ হলো কেন? মাহী বি. চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করছেন আবার সরকারবিরোধী মঞ্চেও আছেন- এ কেমন অবস্থান? বি. চৌধুরী তার ছেলে (মাহী) নিয়ন্ত্রিত। তাই তার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে এমনটা আশা করি না।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছে বিএনপি। ভোটের মাঠে জামায়াতের সাড়ে সাতভাগ ভোট রয়েছে। আর এই জামায়াতকে যারা মঞ্চে তুলতে চায় না তাদের ভোট এক শতাংশেরও কম। দলের নীতি নির্ধারকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, শেষ পর্যন্ত বি. চৌধুরী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে নাও থাকতে পারেন। তাই ড. কামাল হোসেনকে প্রধান ধরেই এগোচ্ছে এই ঐক্য প্রক্রিয়া। গত রোববারের সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, যদি শয়তানও সরকারের শত্রু হয় তার সঙ্গেও তাদের বন্ধুত্ব হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা বিকল্পধারার চালচলন পর্যবেক্ষণ করছি। তারা যেসব দাবি ও শর্ত দিয়েছে তাতে কোনোদিনই ঐক্য হবে না। আর ঐক্য না হলে সরকারের পতনও ঘটবে না। শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিকল্পধারা শেষ পর্যন্ত যুক্তফ্রন্ট থেকে ছিটকে পড়তে পারে। ভাঙতে পারে ফ্রন্টও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads