• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৩ দিন

ভোট ও জোটের রাজনীতিতে ‘ডিগবাজি’ শুরু হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৩ দিন

  • মাহমুদ আল ফয়সাল
  • প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর ২০১৮

regular_4231_news_1539827063

তেরো সংখ্যাটিকে অনেকেই দুর্ভাগ্যের প্রতীক বা ‘আনলাকি থারটিন’ হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু কারো জন্য তা সৌভাগ্যেরও বসতি নিয়ে আসে। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আজ থেকে ১৩ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোট ও জোটের রাজনীতিতে ‘ডিগবাজি’ শুরু হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে রাজনীতি।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী ৩০ অক্টোবরের পর যেকোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসির এই ডেডলাইন ধরেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই ১৩ দিন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় রাজনীতিতে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দৌড়ঝাঁপ চলবে। জমজমাট হবে রাজনীতিতে ভাঙাগড়ার খেলা।

দুই শরিক দল ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলা হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন করে আরো কয়েকটি দল বেরিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের শক্তি বাড়াতে সমমনা আরো কয়েকটি দলকে মহাজোটে শামিল করতে চায়। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে ছিটকেপড়া বিকল্পধারাও ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসাদের পাশাপাশি কয়েকটি দলকে নিয়ে নতুন জোট গঠনে তৎপরতা শুরু করেছে।

বিএনপিকে সম্পৃক্ত করে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেটে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে মাঠে নামবে। ২১ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশীদার যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা। সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট ২০ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট ২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গায় সমাবেশ করবে। ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে। ওইদিন ঢাকায় সমাবেশ করবে ১৪-দলীয় জোট।

বিশ্লেষকরা বলছেন,  দলবদল, জোট-মহাজোটে ভাঙাগড়ার পাশাপাশি কর্মসূচিতে আগামী ১৩ দিন রাজনৈতিক অঙ্গন থাকবে সরগরম ও অস্থির। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজপথে নেমে যেমন সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা করবে, তেমনি সরকারও নানা কৌশলী পদক্ষেপে বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্যাঁড়াকলে ফেলতে চাইবে। ৩০ অক্টোবরের পরপরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বদলে যাবে পুরো দৃশ্যপট; রাজনীতিতে শুরু হবে নির্বাচনী হাওয়া। তখন দলগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তবে সবার প্রত্যাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে কী না, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী ১ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচনপূর্ব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আগামী ১৩ দিন নজরে রাখার মতো। এ সময় রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দৌড়ঝাঁপ চলবে এবং তা চূড়ান্ত রূপ নেবে। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ২০১৪ সালে যেসব দল নির্বাচন বয়কট করেছে, নিবন্ধন ঝুঁকি এড়াতে এবার তাদের সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী ১৩ দিন রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচনের আগের ও পরের দিনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সবাই চায় দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। কিন্তু সরকার নিজেদের অবস্থানে অটল থাকায় এবং আলোচনার দরজা বন্ধ রাখায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি হুমকির মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে সরকার দল ভাঙার রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি নতুনভাবে চালু করেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক বিষয়কে ব্যক্তিগত রেষারেষির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যাচ্ছে।

ড. তারেক শামসুর রেহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কলামিস্ট ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী ১৩ দিন রাজনীতিতে ভাঙাগড়ার খেলা চলবে। তফসিল ঘোষণার পরও কিছুদিন তা বহাল থাকবে। তিনি মনে করেন, ন্যাপ-এনডিপি খুবই ক্ষুদ্র দল এবং জাতীয় পর্যায়ে তাদের কোনো গুরুত্ব নেই। ‘খুচরা সিকি-আধুলি’ এসব দলের নেতা বেরিয়ে গেলেও বিএনপি জোটের কোনো ক্ষতি হবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যক্তি ইমেজ থাকায় বিএনপির প্ল্যাটফর্মে এসে তারা পুরো শক্তিকেই বিশাল করে তুলছেন। এই শক্তি সরকারবিরোধী জনমত গড়ে তুলে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ড. তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয় বলেই প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের সুযোগ পেলে কাঙ্ক্ষিত সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন সহজসাধ্য হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads