• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
সংলাপে সম্মত আওয়ামী লীগ

লোগো আওয়ামী লীগ

রাজনীতি

সংলাপে সম্মত আওয়ামী লীগ

# সংলাপের পাল্টা চিঠি যাচ্ছে আজ # রাতে কাদের-মন্টুর ফোনালাপ

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ সবসময় সেটা প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। কিন্তু নবগঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে হঠাৎ করে আলোচনায় বসতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি দেওয়ার পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টির খুঁটিনাটি জানান।

শুধু সংবাদ সম্মেলনে সংলাপে বসতে সম্মত আওয়ামী লীগ, তথ্যটি জানিয়েই থেমে থাকেননি ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করেন। ফোনালাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংলাপের ফ্রন্টের কতজন সদস্য সংলাপে অংশ নেবেন, সে বিষয়ে মন্টুর কাছে জানতে চান। জবাবে মোস্তফা মহসিন মন্টু জানান, ফ্রন্টের ১৫-২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে সংলাপে। রাতে মোস্তফা মহসিন মন্টু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সংলাপে কারা কারা অংশ নেবেন সেই তালিকা ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে আগামীকাল বুধবার কাঙ্ক্ষিত সংলাপটি গণভবনে হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোয় স্বাগত জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

সংলাপের আলোচনার প্রস্তাব গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ঐক্যফ্রন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি যাচ্ছে আজ বুধবার। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় সংলাপের এ চিঠি নিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। গত রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। তিনি আরো জানান, চিঠি পাওয়ার পর ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বৈঠকে বসে সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের নাম চূড়ান্ত করবেন।

এর আগে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি ওঠে। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বসা নিয়ে মন্ত্রীদের কাছে মতামত জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত মতে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা বৈঠক শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মাথায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানান। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসবেন এমন খবরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঐক্যফ্রন্টের চিঠি এবং আলোচনার বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি মন্ত্রীদের কাছে এও জানতে চান, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত কি না। জবাবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী বলেন, আগুন সন্ত্রাসী, পেট্রোল বোমাবাজদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দরকার নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো আগুন সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নয়। বিএনপির সঙ্গেও নয়। আমি বসব ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেনরা আমার কাছে দরখাস্ত দিয়ে আলোচনা করতে চাইছে। তারা দরখাস্ত দিয়ে আমার বাড়িতে আসতে চাইছে। আমি তো না করতে পারি না। সব সময় আমার দরজা খোলা।

শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, আগেরবার আমি (প্রধানমন্ত্রী) চাইছিলাম। ওরা আসেনি। এখন ওরা দরখাস্ত দিয়ে আলোচনা করতে চাইছে। আসুক। দেখি কি আলোচনা করে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বলেন, আপনি সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি জানিয়ে দেন। আলোচনার সময় ও স্থান পরে জানানো হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হচ্ছে জেনে দারুণ খুশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর একে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, বিএনপি, নাগরিক ঐক্য এবং জেএসডিকে নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন ড. কামাল হোসেন। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এই জোটকে আক্রমণ করা হলেও তাদের সংলাপের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে তারা। যদিও এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বানকে নাচকই করেছিল আওয়ামী লীগ। গত রোববার সংলাপের দাবি জানিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভেরি গুড নিউজ। ঐক্যফ্রন্টের একটা বিজয় হলো। একটা চিঠি দিতে পায়ের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে। এখন সংলাপের নিউজটা খুব ভালো, ইতিবাচক। খুশি হলাম।

ফ্রন্টের আরেক নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ বলেন, আমরা বিষয়টি এখনো জানি না। জানব। আমরা চিঠি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি এখনো শুনিনি। না জেনে কোনো মন্তব্য করব না।

এদিকে, গতকাল সোমবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই বিষয়ে আলাপ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সংলাপে বসতে চায়, তাতে আওয়ামী লীগ সম্মতি দিয়েছে। এর আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ সব সময় সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু এখন নবগঠিত রাজনৈতিক জোটের আহ্বানে সাড়া দিল আওয়ামী লীগ। এই জোটের অন্যতম সদস্য বিএনপিও।

এমন বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য বন্ধ থাকে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমরা সংলাপে বসতে রাজি। আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগেই হবে সংলাপ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সমগ্র দেশবাসীর জন্য প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ দেব, যা সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে। তিনি বলেন, আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী আমাদের নিয়ে একটি অনির্ধারিত বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা মানা হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করুন।

উল্লেখ্য, গত রোববার সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে ড. কামাল হোসেন এবং ওবায়দুল কাদেরকে লেখা চিঠিতে মোস্তফা মহসিন মন্টু স্বাক্ষর করেন। প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কয়েকজন বিশিষ্টজনের সমন্বয়ে ফ্রন্ট গঠিত হয়। এরই মধ্যে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে সিলেটে গত ২৪ এবং ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্ট গঠনের পর এবং সংলাপ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগে চিঠি দিক, তারপর দেখে সিদ্ধান্ত জানাব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads