• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
সমাবেশ থেকে ঐক্যফ্রন্ট আল্টিমেটাম দেবে আজ

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

সমাবেশ থেকে ঐক্যফ্রন্ট আল্টিমেটাম দেবে আজ

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগসহ সাত দফা দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে ফ্রন্ট। গতকাল সোমবার বাংলাদেশের খবরকে এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রন্টের এক নেতা। চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচিতে কী থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রন্টের সাত দফা দাবি আদায়ে ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার তাদের সাত দফা দাবি মেনে নিচ্ছে না। সংলাপের নামে সময় ক্ষেপণ করছে। ফ্রন্টের দাবি না মেনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ফ্রন্ট তা মানবে না। দাবি আদায়ে ফ্রন্ট কঠোর কর্মসূচিতে যাবে। কী কর্মসূচি আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় হলেই গণমাধ্যমকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ফ্রন্টের নেতারা।

দুপুরে মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যালয়ে যান ফ্রন্টের নেতারা। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্রন্টে যোগদান করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এরপর কাদের সিদ্দিকীসহ ফ্রন্টের নেতারা যান মতিঝিলে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে। এরপর ফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল যায় নির্বাচন কমিশনে। বাকিরা থেকে যান মতিঝিলে। সেখানে বৈঠক করেন ফ্রন্টের নেতারা। বৈঠকে সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি বৈঠক করেন তারা।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বাংলাদেশের খবরকে বলেন- সমাবেশে ফ্রন্টের শরিক ৬ দল বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ফ্রন্টের সাত দফা দাবির প্রতি সর্বস্তরের জনগণের যে সমর্থন রয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এই সমাবেশে।

গতকাল দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মঙ্গলবার (আজ) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে : গতকাল দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায় সমাবেশস্থল পরিদর্শন করতে। পরিদর্শন শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ।

তিনি বলেন, সমাবেশ আয়োজন করতে খুবই অল্প সময় হাতে রয়েছে। কিন্তু তারপরও জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, গণজাগরণ, সেই গণজাগরণের মধ্য দিয়ে ইদানিংকালের সর্ববৃহৎ একটি সমাবেশ হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া যে ৭ দফা দাবি, সেই দাবি সামনে রেখে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই কালকের সমাবেশে উপস্থিত হবে। এই ৭ দফা যে জনগণের দাবি, জাতির দাবি, সেটা তারা তাদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রমাণ করবে।

‘সমাবেশ সংলাপে প্রভাব ফেলবে কি না’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমান বলেন, প্রভাব ফেলবে না। বরং সংলাপ এবং সমাবেশ একে অপরের পরিপূরক হবে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

সমাবেশ সফল করতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতি সভা করেছেন। গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এর বাইরে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেন সভায়।

গত রোববার রাতে মতিঝিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আইনি চেম্বারে বৈঠক করেন ফ্রন্টের নেতারা। এ সময় তারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতামত নেন। পরে আগামীকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে যেসব বিষয় তুলে ধরবেন তার খসড়া তৈরি করা হয়। সেখানে তিনটি শর্ত চূড়ান্ত করা হয়। এই তিন শর্ত মানলে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আপত্তি থাকবে না ঐক্যফ্রন্টের। শর্ত তিনটি হচ্ছে- ১. সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ। ২. নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো থেকে মন্ত্রী করে তাদের স্বরাষ্ট্র বা জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়া। ৩. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি ও তার ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাজা স্থগিত করা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads