• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
অপেক্ষার শেষ কবে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

জাকসু নির্বাচন

অপেক্ষার শেষ কবে

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ছাত্র সংসদ! নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি কী বা কী তার কার্যকারিতা এমনটি বুঝে ওঠা যেন অনেকটা দুর্বোধ্য। ছাত্র সংসদের কথা শুনলে অনেকে আবার অবাকও হয়ে ওঠে। এমনটা হওয়া কি অস্বাভাবিক নয়? ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দীর্ঘ ২৭ বছরেও চোখে দেখেনি যেখানকার শিক্ষার্থীরা, তারা কীভাবে বুঝবে তার কার্যকারিতা। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের কথা।

সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে। অপেক্ষার ২৬ বছর কেটে ২৭ বছরে পা দিলেও জাকসু নির্বাচনের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেকটা আলোর মুখ দেখছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে পারছে না অনেক শিক্ষার্থী। জাকসুর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভুলতে বসেছে তাদের অধিকারের কথা। তৈরি হচ্ছে না যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব। ফলে বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা এখন জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধকর্মে। তেমনি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূরত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর ওই বছর গঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জাকসু) এবং অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। প্রথম নির্বাচনে ভিপি হন গোলাম মোর্শেদ এবং জিএস নির্বাচিত হন রোকনউদ্দিন। এরপর ’৭৪, ’৭৯, ’৮০, ’৮১, ’৮৯, ’৯০, ’৯১ ও ’৯২ সালসহ মোট নয়বার জাকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুম হাসান তালুকদার এবং জিএস শামসুলতাবরীজ। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তৎকালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। এরপর থেকে কোনো জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিগত ২৭ বছরে প্রায় সব উপাচার্য জাকসু নির্বাচন দেওয়ার স্বপ্ন দেখালেও কেউই তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

জাকসু ভবনটির বর্তমান দশা : কার্যক্রম বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশে জীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাকসু ভবন। ভবনটিতে বর্তমানে নেই পর্যাপ্ত আলোর সুবিধা। দরজা-জানালা এবং নেই কোনো আসবাবপত্র। কার্যক্রম না থাকায় ভবনটির কয়েকটি কক্ষে বর্তমানে গড়ে উঠেছে প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুল। প্রতিবছর শিক্ষা সমাপনী র্যাগ উৎসবের সময়ই কেবলমাত্র কয়েক দিনের জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে এ ভবনটি। জাকসু চলাকালীন সেই সরব ক্যাম্পাসে এখন আর নেই আগের মতো প্রাণের স্পন্দন।

নির্বাচন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো যা মনে করছে : জাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক দিন ধরে সরব রয়েছেন। বিভিন্ন সময় জাকসু নির্বাচনের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন এমনকি প্রশাসনের কাছে গণস্বাক্ষরপত্র জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গেল ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি জাকসু নির্বাচনের দাবিতে আল্টিমেটাম ও টিচার্স ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে জাবি ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।

জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে সবার অধিকার রয়েছে স্বাধীন মত প্রকাশ করা এবং অধিকার আদায়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য। তবে নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংকট রয়েছে তা উত্তরণে প্রশাসনকে অতিদ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে অবিলম্বে প্রশাসনকে জাকসু নির্বাচন দিতে হবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল খান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনবিহীন আমরা আজ কুক্ষিগত। শিক্ষক রাজনীতির বেড়াজালে বন্দি আমাদের শিক্ষাজীবন।’ জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একমাত্র স্থান হলো ছাত্র সংসদ এবং এর মাধ্যমেই নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। তাই এ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রশাসনের সদিচ্ছদার মাধ্যমে এই নির্বাচন সম্ভব। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকারের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।’

জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন (প্রশাসন) বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক দিন ধরে করে আসছে। আশা রাখছি অতিদ্রুত জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ শেকল ভাঙবে কবে : ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩ অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি পর্ষদ সিনেট। সেই সিনেটে অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে অধ্যাদেশের ১৯ (১) এর (ক) ও ১৯ (২) ধারা মেনে জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেটে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধির বিষয়টি গত ২৭ বছর নিশ্চিত করা হয়নি। দীর্ঘ সময় ছাত্র-প্রতিনিধিদের মনোনীত সদস্য ছাড়াই সিনেটের অধিবেশন বসেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া ও প্রতিফলন ঘটেনি। অপরদিকে, জাকসু ও হল সংসদ না থাকায় বর্তমানে ক্যাম্পাসে যোগ্য ছাত্র নেতৃত্বও যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড চলছে মন্থর গতিতে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন শুধু একটাই, আর কি হবে জাকসু নির্বাচন?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads