• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
আ.লীগ প্রার্থীদের নাম পৌঁছায়নি কেন্দ্রে

লে‍াগো আ.লীগ

রাজনীতি

উপজেলা নির্বাচন

আ.লীগ প্রার্থীদের নাম পৌঁছায়নি কেন্দ্রে

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে সারা দেশের তৃণমূল কমিটির প্রস্তাবিত অনেক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে এসে পৌঁছায়নি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নাম বাদ দেওয়া ও তৃণমূলের ভোটের ফল বদলিয়ে তালিকায় অপছন্দের নেতার নাম পিছিয়ে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। দেশের অধিকাংশ উপজেলা থেকে প্রস্তাবিত দলীয় প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এসে পৌঁছালেও অনেক তালিকার পেছনে নানা ‘নাটকীয়তা’ আছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

কয়েক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নিজ জেলা ও উপজেলায় পছন্দের প্রার্থীদের নাম তালিকায় রেখেছেন বলে অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে তারা তৃণমূলের প্রস্তাবিত নেতার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন বা তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পৌঁছানোর আগে ‘গায়েব’ করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়েছেন তালিকা থেকে। এ নিয়ে তৃণমূলে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়মের বিষয়গুলো মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আনতে চাইছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সব অভিযোগ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড খতিয়ে দেখবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

তথ্য মতে, প্রথমবারের মতো এবার উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে। এ নির্বাচনে সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের কমিটির প্রস্তাবে প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রায় সব উপজেলায় নির্দেশ পাঠানো হয় জনপ্রিয় প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠাতে। নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তালিকাও পাঠান। সেই তালিকায় থাকা নেতারাই উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়নপত্র কেনার কথা।

তবে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হলে তা কিনতে এসে অনেকে জানতে পারেন, তৃণমূল থেকে বাছাই করে তাদের নাম পাঠানো হলেও তালিকা এসে কেন্দ্রে পৌঁছায়নি। যে প্রার্থীর নাম তৃণমূলের প্রস্তাবে ছিল না, কেন্দ্রে এসে দেখা যাচ্ছে, তালিকার শীর্ষে সেই প্রার্থীর নাম এমন ঘটনাও ঘটছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন গতকাল বাংলাদেশের খবরের কাছে অভিযোগ করেন, ‘তৃণমূলে যে প্রার্থী মাত্র অল্প কয়েকটি ভোট পেয়েছেন, তাদের নামও ওপরের দিকে আছে। যারা বেশি ভোট পেয়েছেন, তাদের নাম তালিকার নিচের দিকে চলে গেছে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের স্বজনপ্রীতির কারণেই এমনটি ঘটেছে।’ তাদের অভিযোগ, ‘অনেক এলাকা থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের ইচ্ছামতো তিনজনের নাম পাঠাচ্ছেন। তৃণমূল কমিটির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়টি সেসব উপজেলায় লোক দেখানো।’

বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা নিজ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলার নেতাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রার্থীর তালিকায় হেরফের করাসহ বিগত দিনে তারা যেসব দুর্নীতি ও অন্যায় করেছেন, সেগুলোরও প্রমাণসহ তারা অভিযোগ করেছেন। তৃণমূলে ভোটের মাধ্যমেই যেন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম পাঠানো হয়, এমন প্রত্যাশা করেন তারা।’

এসব প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে দলীয় মনোনয়ন দেব। তৃণমূল থেকে শুধু তিনজনের নাম চেয়েছি। এক থেকে তিনজনের বেশি নয়, আবার একজন, দুজন বা তিনজনের নামও কেউ দিতে পারেন। মনোনয়নের বিষয়ে আমরা দেখব যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষর রয়েছে কি না। সেই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে কি না, সেটাও দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোথাও এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণের ব্যত্যয় ঘটলে সেখানে আমরা জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেব। কাজেই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সবকিছুই যাচাই করে দেখা হবে।’

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এ প্রসঙ্গে জানান, ‘তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কারণে কয়েকটি উপজেলা থেকে একাধিক নাম পাঠানো হয়েছে। প্রার্থীদের লিখিত অভিযোগ জানাতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড যদি মনে করে, অভিযোগ ঠিক আছে, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গতকাল আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, তালিকায় নাম নেই, এমন প্রার্থীরাও ভিড় জমাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। জানাচ্ছেন নানা অভিযোগ। তবে মনোনয়ন কেনার পাশাপাশি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন অনেক প্রার্থীই। এ কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি ও জমা নেয়া চলবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ‘তালিকায় নাম না থাকা যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।’

নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার দেওয়া তথ্য মতে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। তিনি জনপ্রিয়, যোগ্য ও দলের ত্যাগী নেতাদেরই মূল্যায়ন করবেন। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সভায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কর্মকৌশল চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রার্থীও তালিকাও চূড়ান্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads