• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
সচল হলো ডাকসু

ডাকসুর কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

শেখ হাসিনা আজীবন সদস্য

সচল হলো ডাকসু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০১৯

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সচল হয়েছে। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সদ্য সমাপ্ত ভোটে নির্বাচিত ডাকসুর প্রতিনিধিরা শনিবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। প্রধান কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার মাধ্যমে ডাকসুর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনের কার্যনির্বাহী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব করা হয়।

গতকাল শনিবার দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীসহ ২৫টি পদে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। এর মধ্য দিয়েই ডাকসুর এক বছর মেয়াদি কমিটির যাত্রা শুরু হলো।

বেলা ১১টার পর ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় কার্যকরী পর্ষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। এরপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর রাব্বানী কেন্দ্রীয় সংসদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর জিএস সভাপতির কাছে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের অনুমতি নেন। পরে ভিসি ড. আখতারুজ্জামান এক বছরের জন্য অনুমতি দেন।

সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব তোলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী। কিন্তু তার এই প্রস্তাবে আপত্তি জানান নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরসহ সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

প্রস্তাবে আপত্তির বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে ডাকসু, সেখানে তার মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে সদস্য করা ঠিক হবে না। তার কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন সমাজসেবা সম্পাদকও।

এ বিষয়ে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, যেখানে অধিকাংশ সদস্য মত দিয়েছেন সেখানে একজনের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, যে প্রস্তাব উঠেছে তা আমরা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবনের সদস্য করার বিষয়টি আগামী সভায় চূড়ান্ত করা হবে।

সভা শেষে ভিসি, ভিপি ও জিএস সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনা হবেন ডাকসুর আজীবনের সদস্য হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি।

সভার পরই ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ সবাই নিজ নিজ রুমে বসেন। কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদে নির্বাচিতরাও গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে হল সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন প্রাধ্যক্ষরা। এর বাইরে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদগুলোতে একজন করে ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী পরে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডাকসু প্রাণ ফিরে পাওয়ায় প্রথম কার্যকরী সভায় একটি বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সভাপতি ও ভিসি ড. আখতারুজ্জামান এবং জিএস গোলাম রাব্বানী।

ডাকসুর কার্যকরী সভা শেষে আখতারুজ্জামান বলেন, আজ (গতকাল) প্রথম কার্যকরী সভা হলো এবং এর মধ্য দিয়েই ডাকসুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। এর মানে হলো, আমাদের ডাকসুর গঠনতন্ত্র বলে, যেদিন প্রথম কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হবে সেদিন থেকেই ৩৬৫ দিনের সেই শুভযাত্রাটি শুরু হলো। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি ডাকসুর ভিপি, জিএস, এজিএসসহ প্রত্যেকেই। আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বড় আকারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তারা করবে। সেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন। একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করার দায়িত্ব দিয়েছি কার্যকর পরিষদকে। ভিপি, জিএস, এজিএসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা বিভিন্ন কমিটি করে তারা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটি আমাদের বড় দাগের আজকের সিদ্ধান্ত।

ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আমাদের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একটি অভিষেক অনুষ্ঠান করতে চাই। সেটা সম্ভবত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মানিত আচার্যকে দাওয়াত করা হবে।

সভা শেষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। দুপুর আড়াইটার দিকে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। সে বছর ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতনের পর শুধু ডাকসু নয়, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। প্রায় তিন দশক ধরে অচলাবস্থার পর গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৫টি পদের ২৩টিতে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ জিতলেও ভিপিসহ দুটি পদে জয় পায় কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকারীদের প্যানেল। দুটি পদের মধ্যে ভিপি হিসেবে জয়লাভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে জয়লাভ করেন আকতার হোসেন। সংসদে ১৮টি হলের মধ্যে ৯টি হলেই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল জয়ী হয়।

ছাত্রদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য থাকলেও মেয়েদের চারটি হলে স্বতন্ত্র প্যানেলগুলো নির্বাচনে ভালো করে। মেয়েদের রোকেয়া হলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ছাত্রলীগের প্যানেল। ডাকসুর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোষাধ্যক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামকে এই পদে মনোনীত করেন ডাকসুর সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তবে কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাম জোট, ছাত্রদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি জোটের প্যানেল নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads