• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
পুনর্জাগরণের প্রস্তুতি রাজনৈতিক দলে

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

পুনর্জাগরণের প্রস্তুতি রাজনৈতিক দলে

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৯

নতুন নেতৃত্বের সন্ধানে রাজনৈতিক দলগুলো। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে প্রস্তুতি চলছে কাউন্সিলের। ইতোমধ্যে দিন-তারিখ নির্ধারণ করেছে অনেক দল। বাকিরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারো প্রস্তুতি চলছে নীরবে। মূল দলের পাশাপাশি পুনর্গঠন করা হচ্ছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও। 

এদিকে দলীয় কাউন্সিল ঘিরে প্রকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি বিরাজ করছে অনুপ্রবেশ আতঙ্কও।

আলাপকালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা তাদের শঙ্কার কথা প্রকাশ করে বলেন, দলীয় কাউন্সিলে নতুন নেতা আসবেন, পুরনোরা আসবেন নতুনরূপে। তবে শঙ্কার বিষয় জামায়াতে ইসলামী। তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করবেন। ইতোমধ্যে খোলস পাল্টে অনেকেই ঢুকে গেছেন বিভিন্ন দলে। তারা এখন ওইসব দলের জন্য বিষফোড়া।

 

আওয়ামী লীগ :

আগামী অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব সফরের মধ্যদিয়ে নেতারা তুলে আনছেন তৃণমূলে সংগঠনের প্রকৃত চিত্র। ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই জেলায় জেলায় চলছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর। এসব সফরে সাংগঠনিক ৮টি টিমে ভাগ হয়ে তৃণমূলের নেতাদের কথা শুনছেন নেতারা। সমাধান করছেন দীর্ঘদিনের কোন্দলের। একটি ফরমও পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের যেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানতে চাওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে কর্মীদের তথ্য ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্তির কাজও। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া জেলাগুলোতে সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে এসব কমিটিতে যেন বিএনপি-জামায়াতের কোনো অনুপ্রবেশকারী ঠাঁই না পায় সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করছে দল।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কারণে জামায়াত ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এখন হতাশ।  তারা নিজ নিজ এলাকায় নিজের ক্ষমতাটা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে যে কোনো মূল্যে দলে জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা। কোনো কিছুর বিনিময়েও তারা এই অনুপ্রবেশ ঘটতে দেবেন না।

বিএনপি :

দল গঠনের পর থেকে কখনো সময়মতো কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট আরো নেতিবাচক। তবে সময়ের প্রয়োজনে খুব শিগগিরই দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম, পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে পুনর্গঠন চলছে।

দলীয় সূত্রের তথ্য, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের নির্বাহী কমিটির মেয়াদ তিন বছর। দলটির ষষ্ঠ এবং সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের ছয় বছর পরে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জানিয়েছেন, তারা ঈদুল আজহার আগেই কাউন্সিল করতে চান। স্বল্প সময়ে মধ্যে কাউন্সিল করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য গত কাউন্সিলের প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মহাসচিব বিষয়টি গণমাধ্যমে জানালেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

কাউন্সিল হলে দলের নতুন কমিটিতে নতুন নতুন নেতার আগমন ঘটে। পুরনো নেতাও পদোন্নতি নিয়ে নতুনরূপে আসেন। এবারো নতুন মুখ দেখা যাবে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা।

এদিকে দলটির জ্যেষ্ঠ একাধিক নেতার আশঙ্কা, এবারের নতুন কমিটিতে তাদের জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর অল্প পরিচিত নেতাকর্মী বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে প্রবেশ করতে পারে। তবে এর জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

জাতীয় পার্টি :

পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর অংশ হিসেবে দলটি গত শনিবার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের এমপিদের নিয়ে যৌথ বৈঠক করেছে। তাতে দলের রাজনৈতিক দর্শন বদলের পরামর্শসহ মনোনয়ন বাণিজ্য, নতুন নেতা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে চার দিনব্যাপী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্মেলন শুরু করেছে জাপা। আগামী সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে এগুচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। যদিও জাপার গঠনতন্ত্রে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি কেবলই কথার কথা। পার্টিপ্রধানের একক আধিপত্য শেষ কথা। এই দলের কর্তা এরশাদ। আর দলের কর্তার ইচ্ছাই কর্ম।

কাউন্সিল প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এখন জাতীয় পার্টিতে যেসব কার্যক্রম চলছে তা কাউন্সিলকে ঘিরেই। কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আসবে, দল সুসংগঠিত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অহিংস রাজনীতি করে জাপা। এ দলে প্রবেশ করে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন নেতাদের বেলায় আমরা সবসময়ই সতর্ক আছি। তবে পরিচ্ছন্ন নেতাদের জন্য দরজা খোলা থাকবে।

জাসদ (রব) :

আগামী ২৪ অক্টোবর কাউন্সিল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির স্টিয়ারিং কমিটি। এ লক্ষ্যে গত ১৪ জুন দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে তার উত্তরার বাসভবনে জেএসডির স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কাউন্সিল প্রস্তুতি পরিষদ গঠন করা হয়।

আবদুুল মালেক রতন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভেন্যু হতে পারে মহানগর নাট্যমঞ্চ। তিনি জানান, দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন, দলকে আন্দোলন উপযোগী নেতা উপহার দেওয়াসহ মানুষের দাবি নিয়ে রাজপথে নামতেই জাসদের প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে আলোচনা ও প্রস্তুতি চলছে দল পুনর্গঠন নিয়ে। কেউ গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশ করছেন, কেউবা এগুচ্ছেন নীরবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads