• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব নিরসনে টনিক সাদ এরশাদ

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব নিরসনে টনিক সাদ এরশাদ

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বাসা বেঁধেছে জাতীয় পার্টিতে। এই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক। তবে লড়াইয়ে মেতেছেন একই পরিবারের সদস্যরা। একজন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, অপরজন কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। দুজনের সম্পর্ক, পরিচিতি দেবর-ভাবি। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় শুরু হওয়া লড়াই চলছে তার মৃত্যুর পরও।

এদিকে দলের দুই শীর্ষ নেতার লড়াইয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন অন্য নেতারাও। দলটির ২৬ এমপির মধ্যে ১৫ জনই জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেখতে চান।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত এ নিয়ে রওশন এরশাদপন্থিদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব নিরসনে ইতঃপূর্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। তাতে আলোচনায় এসেছে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়। পার্টির সামনে বিশেষ ইস্যু দলের চেয়ারম্যান পদটি। কাদের-রওশন দুজনই পরস্পরকে মানতে নারাজ। এরশাদ তার ছোট ভাই জি এম কাদেরকে দলের কাণ্ডারির দায়িত্বে দেখতে চেয়েছেন। সেমতে চিঠি চালাচালিও করেছেন; কিন্তু বাদ সেধেছেন এরশাদপত্নী রওশন। পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে বিনা কাগজে ঘোষণা দিলেও তাতে নারাজি দিয়ে রেখেছেন রওশন, যা চটকদার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে সংবাদমাধ্যমে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার মতো আপাতত জাতীয় পার্টিতে কেউ নেই। তবে পার্টির লাগাম এখন অন্যের হাতে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই চেয়ারম্যান পদ রক্ষায় ভাবির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন কাদের। তাতে দুটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছিল। একটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া (রংপুর-৩) আসনে মনোনয়ন।

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম মেম্বার গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, দুই ইস্যুতে পরস্পরকে ছাড় দিতে যাচ্ছেন দেবর-ভাবি কাদের-রওশন। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাহ্যিক বিরোধ চরমে উঠলেও ভেতরে ভেতরে তা শীতল হয়ে আসছে। জাপার শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে চলমান বিরোধ মেটাতে টনিক হিসেবে কাজ করবেন সাদ এরশাদ। রংপুর-৩ আসনে রওশনপুত্র সাদ এরশাদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনাও করেছেন। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন কাদের। 

তবে ‘সাদ এরশাদ’ টনিকের কার্যকারিতা নির্ভর করছে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ওপর। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আওয়ামী লীগে।

এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে সাদকে নিয়ে আপাতত জি এম কাদের ভাবলেও তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জাপার রংপুরবাসীরা। তারা সাদকে এরশাদের সন্তান হিসেবেই মানতে নারাজ। কারণ এরশাদই বলেছেন, ‘এরিক আমার একমাত্র পুত্র। তোমরা তাকে দেখে রেখো।’ এমন মন্তব্যের পর থেকেই পিতার রংপুরে অপােক্তয় হতে শুরু করেন সাদ এরশাদ। যখন নির্বাচনের ডামাডোল বাজছে তখন সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন রংপুরবাসী।

রংপুরকে ঘাঁটি হিসেবে দাবি করছে জাতীয় পার্টি। তাই ওই আসনে প্রয়াত এরশাদের নিকটজন থেকে কাউকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন চান এরশাদের তিন স্বজন- ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার, ভাগ্নি মেহজাবুন্নেছা টুম্পা ও রওশনপুত্র সাদ এরশাদ। 

স্পিকারকে কাদেরের চিঠি, ১৫ এমপির সমর্থনপত্র  

কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেখতে চান পার্টির ১৫ জন এমপি। গতকাল দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সংসদের স্পিকার বরাবর দাখিল করা হয়েছে। তাতে জি এম কাদের উল্লেখ করেছেন, দলটির প্রেসিডিয়ামের সভায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রেসিডিয়ামের সভার রেজুলেশন এবং ১৫ জন এমপির সমর্থনপত্র। এ চিঠির পর জাতীয় পার্টিতে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ দলটির ২৬ জন এমপির মধ্যে সমর্থন দিয়েছেন ১৫ জন। আর গত প্রেসিডিয়ামের সভায় ৫৩ সদস্যের মধ্যে ২৫ জনই জি এম কাদেরের ডাকে সাড়া দেননি। অনুপস্থিতির তালিকায় ছিলেন রওশন এরশাদও।-

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads