• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কথায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

কথায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা কারণে ও অকারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত। তারা টিভিতে ও পত্রিকায় নিজের ছবি ও বক্তব্য প্রচারে যত আগ্রহী, দলের সাংগঠনিক কাজে গতি ফেরাতে ও নানাভাবে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তত আগ্রহী নন বলে অভিযোগ আছে। প্রায় ১১ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার দেশের নানা খাতে উন্নতির স্বাক্ষর রাখলেও দলীয় কার্যক্রম সেভাবে গোছালো রাখতে পারেননি দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শুধু কথায় ব্যস্ত থাকা কয়েক নেতার জন্য গত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যক্রম একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছে।

কার্যনির্বাহী সংসদ তিন বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদে এ পর্যন্ত মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন শেষ করতে পেরেছে। কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও দলীয় সদস্যদের নবায়ন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে এবারের মতো দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এমনভাবে গতিহীন ও পিছিয়ে থাকার নজির অতীতে নেই বলে জানান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছরে তৃণমূল বেশ অগোছালো হয়ে পড়েছে। সারা দেশে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা থাকলেও ২০১৭ সালে শুধু মৌলভীবাজার জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাকি ৭৭টি জেলার কমিটির মেয়াদ নেই। মেয়াদ পার হওয়া কমিটি দিয়ে চলছে তৃণমূল। অনেক জেলার কমিটির নির্ধারিত সময় পার তো হয়েছেই, সঙ্গে এক যুগেরও বেশি কেটে গেছে। তিন বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে একাধিকবার আশ্বাস পেলেও এলাকাগুলোর নেতাকর্মীরা নির্ধারিত সময়ে নতুন কমিটি পাননি। তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে গত জুন মাসে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেন। তাতেও সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রত্যাশিত রকমে এগিয়ে যায়নি বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছরের।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ তৃণমূলে সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বে থাকে। কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ সাধারণত তিন বছর। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ, অর্থাৎ ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছর পূর্ণ হবে চলতি বছরের অক্টোবরে। সারা দেশে এত দিন সম্মেলন না হওয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে দলকে চলতে হওয়ার দায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ওপরই পড়ে বলে মনে করে শীর্ষ নেতৃত্ব। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত তিন বছরের মধ্যে কমিটি না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়িত্বশীল নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন তিনি। নেতারা জেলা সফর করেন কিন্তু কাজ করেন না বলেও ভর্ৎসনা করেন দলীয়প্রধান। ওই বৈঠকে মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির অন্য কয়েক নেতাও।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা তিন বছর ধরে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার নানা অজুহাতে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেন। নিজেদের প্রচারণায় তারা যেভাবে ব্যস্ত থেকেছেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তাদের তেমন তৎপরতা ছিল না। তাদের প্রচারবাজির বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলেও নেতিবাচক আলোচনা আছে।’

সূত্র জানায়, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করতে হবে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে ৭৮টি জেলার মধ্যে ৫৮টি জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সব কমিটির নির্বাচন বা দেশের সব এলাকায় সম্মেলন করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীরও। এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলের অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করার বিষয়ে দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফলে হাতে থাকা দুই মাস ১০ দিনের মতো সময়ের মধ্যে সারা দেশে সম্মেলনের আয়োজন ও তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন আদৌ সম্ভব কি না, এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কমিটির নির্বাচন শেষ করার নির্দেশ আছে দলের। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন শেষ করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সারা দেশে নির্দেশও পাঠানো হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে একসঙ্গে সারা দেশে অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলনের করতে হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় কমিটিকে এখন প্রবল চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, তিন বছর পরপর একেবারে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করার কথা। একই সঙ্গে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সীদের দলের নতুন সদস্য করার কথা বলা আছে। এ প্রক্রিয়া তেমন একটা মানা হয় না বলে অভিযোগ আছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত জুন মাসে গণমাধ্যমের কাছে ঘোষণা দেন, ১ জুলাই থেকে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। পরে দলীয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২১ জুলাই থেকে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা বলা হয়। তবে এ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। টানা ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকাকালে দুইবার দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও কোনোবারই শেষ করতে পারেনি তৃণমূল আওয়ামী লীগ। ২০১৭ সালে সাড়ম্বরে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও পরের বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোয়ারে তা অনেকটাই স্থিমিত হয়ে যায়। এর আগে ২০১০ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ওই বছরও তা বেশি দিন চলেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads