• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদার শারীরিক অবস্থা বর্ণনাকালে কাঁদলেন দুই এমপি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

খালেদার শারীরিক অবস্থা বর্ণনাকালে কাঁদলেন দুই এমপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ অক্টোবর ২০১৯

জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি দলীয় তিন এমপি সাক্ষাৎ করে আসার পর সাংবাদিকদের কাছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে এরকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন হারুনুর রশীদ, যিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবও। এ সময় অপর দুই এমপির চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।

হারুনুর রশীদ বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ রয়েছে এগুলোর জন্য উনার অবিলম্বে বিদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বাস্তবিকই উনার জামিন পাওয়ার যে নৈতিক অধিকার এই জামিনের অধিকার থেকে তাকে যেন বঞ্চিত করা না হয়। উনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চান কি না প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, উনি চিকিৎসার সুযোগ খালেদার শারীরিক অবস্থা পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশ যাবেন এবং উনি যদি আজকে জামিন পান প্রথম অগ্রাধিকার হবে উনার চিকিৎসা। তাহলে কালকেই দেখা যাবে, উনি ভিসার জন্য বাইরে যাবেন। যেরকম তার শারীরিক কন্ডিশন তার চিকিৎসা বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেই।

ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) অসুস্থ হয়েছিলেন তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন এই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা সারা দেশের মানুষ জানতে চায়।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় একাদশ সংসদের তিন এমপি ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের হারুনুর রশীদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আমিনুল ইসলাম বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে ৬ তলায় যান, যেখানে একটি কেবিনে খালেদা জিয়া রয়েছেন। এক ঘণ্টা এ সাক্ষাৎ হয়।

হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা বিএনপির তিন এমপি আজকে আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম। খুব বেদনাদায়ক, খু্‌বই পীড়াদায়ক এবং কষ্টদায়ক- এটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই বয়সে আমি মনে করি যে, সরকারের একটা চরম জুলুমের বহিঃপ্রকাশ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উনি চরম অসুস্থ এবং হাত দিয়ে নিজের খাওয়াটাও নিজে খেতে পারেন না, নিজের কাপড়ও নিজে পরতে পারেন না। এই অবস্থায় উনাকে বন্দি রাখা- এটা কত বড় অমানবিক। উনি শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমরা আমাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই।

অশ্রুসজল কণ্ঠে হারুন আরো বলেন, উনি হাত সোজা করতে পারেন না, উনার হাত কাঁপে। পোশাকটাও উনার সঙ্গে যারা আছে তাদের পরিয়ে দিতে হয়। নিজের পরিমাণমতো খাওয়াটাও নিজে খেতে পারেন না। এরকম একটা অবস্থা। আমি বলব যে, এটা তার প্রতি একটা জুলুম হচ্ছে। শুধু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলছি, আজকে এই জুলুম থেকে তাকে যেন আল্লাহ পাক মুক্ত করেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

হারুন বলেন, উনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। আজকে তিনি চরম অমানবিক জুলুমের শিকার, এটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব বাংলাদেশে তথাকথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে, ক্যাসিনোর অভিযানের মধ্য দিয়ে আজকে যে চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, আজকে আমাদের সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। এটি কত বড় অন্যায় জুলুম।

সাংগঠনিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনি সংগঠনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যেহেতু উনার শারীরিক যে অবস্থা...। উনাকে আমরা বলেছি, গত এক মাসে সারা দেশে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলো হয়েছে সরকারের বাধা-বিপত্তির পরও। লক্ষ লক্ষ লোক ওইসব সমাবেশে যোগদান করেছে। উনি শুধু বললেন, তোমরা সবাইকে নিয়ে দেখেশুনে একসঙ্গে থাকো। দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে এলে মানুষ যেন মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে, তাদের ভোটাধিকার ফিরে পায় সেজন্য কাজ করো।

সংসদে যোগদান নিয়ে দলের ভেতরে বিভক্তি থাকলেও আপনারা আপনাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি সামনে রেখেই সংসদে গেছেন- এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি বা কোনো বার্তা নিয়ে আপনারা এসেছেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না। আমরা সংসদে যোগদান করার পরে সংসদে আমরা যে কজন কথা বলার চেষ্টা করেছি তার মধ্যে মাননীয় নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি অন্যতম ছিল। আমি দলনেতা হিসেবে ইতোমধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুই-এক জায়গায় কথাও বলেছি, তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছি। এই ব্যাপারে উনারা দেখা যাক, এটা আইনি ব্যাপার এসব বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি বারবার বলেছি যে, আজকেও দেশবাসীর উদ্দেশে জানাচ্ছি, উনার জামিনের যে অধিকার, সেই অধিকার থেকে উনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সরকার জামিন দেবে আমি মনে করি, এটা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সরকারের তরফ থেকে প্যারোলের কোনো প্রস্তাবনা আছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না। এই ধরনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। প্যারোলের বিষয়টা আসবে কেন? উনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে উকিল আবদুুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলামসহ ৬ জন নির্বাচিত হয়ে সংসদে যোগ দেন দলের সিদ্ধান্তে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় এমপিদের সাক্ষাৎ এই প্রথম। তিন এমপি তাদের নেত্রীর জন্য ফুলের তোড়া ও ফল-মূলের একটি ঝুড়ি নিয়ে যান।

তবে হারুনের এ বক্তব্যের সপক্ষে এখনো পর্যন্ত সিনিয়র নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads