• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
ড. কামালের ওপর সন্দেহ বাড়ছে

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

ড. কামালের ওপর সন্দেহ বাড়ছে

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৯

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতা ড. কামালের কাছে অনেক প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বিএনপি এখন ঐক্যের টানে আর ঐক্যফ্রন্টে যায় না। ঐক্যফ্রন্টের এই নেতার পথ অনুসরণ করতে গিয়ে উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বিএনপিকে। অর্থ, জনবল আর তাদের দেখানো পথে হেঁটে কী পেল বিএনপি? এই প্রশ্ন বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে।

একই সঙ্গে ড. কামালের নতুন চাল নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কটুবাক্যে জর্জরিত হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত মঞ্চে ড. কামাল যে ধরনের মন্তব্য, বক্তব্য আর ভূমিকা রাখেন তা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষোভটা কেউ প্রকাশ করছে প্রকাশ্যে আবার কেউ দলীয় ফোরামে। নানা নাটকীয়তার পর ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে

 বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, এই ঐক্য কোনো দলের স্বার্থে নয়। জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য করা হয়েছে। ফ্রন্টের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তাদের ঘোষণায় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু সাত দফার কোনো দাবি ও ১১টি লক্ষ্যের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। সে থেকেই বিএনপির প্রশ্নপত্র দীর্ঘ হচ্ছে।

রাজধানীর পল্টন থানা বিএনপির কর্মী ইফতেখার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা টকশোতে ভালো, সেমিনারে ভালো, ফেসবুক লাইভে দুর্দান্ত, আদালতে ভালো, পরিকল্পনায় চমৎকার; খালি ভোটের বাক্সটা শূন্য। তাদের পেছনে ঘুরে কোনো লাভ হবে না-এটা আমরা কর্মীরা বুঝলেও নেতারা কেন এতদিন বোঝেনি তা আমাদের বুঝে আসে না। নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ দলের এমন অবস্থা-বলেন ওই কর্মী।

বিএনপির দুই ভাইস-চেয়ারম্যান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামালের অতীত ভেবে ঐক্য করা প্রয়োজন ছিল। তারপরও বাহ্যিকভাবে সরকারের বিরোধিতা করার জন্য তার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল বিএনপি। সব দাবি অগ্রাহ্যকারী সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া হলো। ওই সময় সরকারের সঙ্গে অন্তরালের আলোচনার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে ড. কামাল হোসেন। কী ছিল আলোচনার ইস্যু, ফলাফলই বা কী-এ প্রশ্নের জবাব আজো মেলেনি।

নির্বাচনে আগে দুই দফায় প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।

নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির তরফ থেকে সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচি হরতালের সিদ্ধান্ত ছিল। ঐক্যফ্রন্ট তাতে বাগড়া দিয়েছে। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব আলোর মুখ দেখেনি।

ওই সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধারণা ছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে হয়তো তাদের দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। কিন্তু সে আশাও ফিকে হয়েছে। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আটজন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমে তাদের অভিযোগ ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি তাই সরকার অবৈধ, আর অবৈধ সংসদে যোগ দেবে না বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট। সে কথাও শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেনি। শুরুটা করেছেন ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম নেতার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। এরপর বিএনপির ছয় এমপিও শপথ নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা আশান্বিত হয়। দলীয় এমপিরা সংসদে গেছে হয়তো কারাগার থেকে খালেদা জিয়াসহ বন্দি নেতারা মুক্তি পাবেন। কিন্তু সেটাও হয়নি। উল্টো ওই সিদ্ধান্ত দলের নীতিতে আঘাত এনেছে।

এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দিনে দিনে ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে থাকে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় প্রথমে বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই অংশ নিতেন। কিন্তু দিনে দিনে তাতে ভাটা পড়ে। মির্জা ফখরুল থেকে এখন স্থায়ী কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঐক্যফ্রন্টের সভায় যোগ দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমি, ব্যারিস্টার মওদুদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ড. মঈন খান ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকগুলোতে আগে যেতাম এখন যাই না। আমাদের প্রতিনিধি যায়। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সভাগুলোতে আগে যেতাম এখন আর খবর রাখি না।

সম্প্রতি বুয়েট ছাত্র নিহতের ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচি ঘোষণা করে ড. কামাল। গতকাল বুধবার তা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাতে সরকারের অনুমতি মেলেনি। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক আরেক নেতা ও ফ্রন্টের সদস্য আ স ম আবদুর রব। আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন তিনি।

এদিকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করেছেন ফ্রন্টের সাত নেতা। ড. কামালের নেতৃত্বে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে চান। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জানিয়েছেন দেখা হতে পারে জেলকোড মেনে। এর ফলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে গতকাল বুধবারও আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে যে-এটাও ড. কামালের আরেকটি কৌশল। খালেদা জিয়ায় দুর্বল বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে পেতে এ কৌশল নিয়েছেন তিনি। কামাল কখনো বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে-এমনটি মনে করেন না যুবদলের সাবেক নেতা আবুল কালাম আজাদ। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads